
মস্তিষ্কে টিউমার সাধারণত শিশুদেরই হয়। তবে বড়দেরও এটি হতে পারে। রোগের কারণ জানা না গেলেও বংশগত বা জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশগত কারণ, বিকিরণের প্রভাবে মস্তিষ্কে টিউমার হতে পারে। উপসর্গের শুরুতে সাধারণত মাথাব্যথা, খিঁচুনি, ব্যক্তিত্ব ও আচরণে পরিবর্তন, শরীরের কোনো অংশে দুর্বলতা, বমি ভাব বা বমি হওয়া, কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা, চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাই দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তি বিকাশের ফলে উন্নত পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয় করা যায়। সম্পূর্ণ ও সঠিক চিকিৎসায় অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
সাধারণত কিছু অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে যদি মস্তিষ্কে চাকার সৃষ্টি করে, তাকে ব্রেইন টিউমার বলে। দুই ধরনের টিউমার আছে। একটি ধরন ধীরে ধীরে বাড়ে এবং মস্তিষ্কের অন্যত্র ছড়ায় না। এগুলোকে বেনাইন বা নির্দোষ টিউমার বলে। তবে বড় আকৃতির টিউমারের চাপে মস্তিষ্কের সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আরেক ধরনের টিউমার, যা ক্যানসার হিসেবে নির্ণীত হয়, দ্রুতই মস্তিষ্কের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই টিউমার নিরাময় হয়। চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের আকার, ধরন, রোগীর বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত অস্ত্রোপচার, রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপি, কখনো ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও ক্যানসার চিকিৎসায় নিত্যনতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে। অল্প সময়ে সঠিকভাবে বিনা অস্ত্রোপচারে রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতির নাম রেডিওসার্জারি। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পরও সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
ক্যানসার থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে কার্যকর উপায় স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা। স্বাস্থ্যকর খাবার তথা প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল, অস্বাস্থ্যকর খাবার, আর্সেনিকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।
অধ্যাপক ডা. কাজী মনজুর কাদের, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রধান, অনকোলজি, বিভাগ, ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা
সূত্র: প্রথম আলো
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন