বিয়ের আগে যত্নআত্তি

মানবকণ্ঠ
ছবি - সংগৃহীত।
রেহনুমা তারান্নুম

প্রতিটা সম্পর্কই যত্ন চায়। আর বিয়ের সম্পর্কটা আরো বেশি। প্রত্যেকটা ছেলে এবং মেয়ে ফিজিক্যালি, বায়োলজিক্যালি এবং মেন্টালি একেবারে আলাদা। কিন্তু এই আলাদা দুটি মানুষই বিয়ের সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় একসঙ্গে জীবনযাপন করার জন্য-

একটা ছেলে কতটুকু জানে একটা মেয়ে সম্পর্কে, অপরদিকে একটা মেয়েই বা কতটুকু জানে একটা ছেলে সম্পর্কে। যেমন- একটা ছেলে যে কোনো একটা কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা পারে না। তারা একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারে। ছেলে এবং মেয়ে সম্পর্কে যদি এই রকম স্বাতন্ত্র্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো জানা থাকে তবে দু’জন আলাদা মানুষেরও একসঙ্গে থাকাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ, কেউ যেন কাউকে শাসন না করে। শাসক হয়ে যদি কেউ (স্বামী অথবা স্ত্রী) অনুশাসন করতে চায় তবে তখনই সূত্রপাত হয় দ্বন্দ্বের। আবার স্বামী বা স্ত্রী প্রত্যেকেরই উচিত অপরজনকে একটু জায়গা দেওয়া বা ছাড় দেওয়া।

সবসময় একজন আরেকজনকে ঘিরে থাকলে বা নজরদারিতে রাখলে সে সম্পর্ক একটা সময় মলিন হয়ে যায়। মূলকথা হলো, একজন আরেকজনকে বুঝতে হবে। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে নয় তার জায়গায় দাঁড়িয়ে। আসলে এই বিবাহিত জীবন প্রত্যেক মানুষের জীবনেই হতে পারে আনন্দের। যদি তাদের মধ্যে থাকে ভালো বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সহযোগিতা। এক্ষেত্রে দু’জনকেই ছাড় দিতে হয়।

বিয়ের পর প্রত্যেক মানুষই নতুন সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত হয়। যেমন: দেবর, ননদ, শ্বশুর, শাশুড়ি, শালা-শালি এমন আরো অনেক। দু’জনকেই নতুন নতুন সম্পর্কের কাছাকাছি আসতে হয়। তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে একটা মেয়েকে একটু বেশি করতে হয়। কারণ বিয়ের পর একটা মেয়ে তার বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে বসতি গড়ে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় তার স্বামীর সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি। মানুষ একা থাকতে পারে না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে পারার মধ্যেই একটা মানুষের কৃতিত্ব। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্যের।

ধৈর্য সহকারে সবকিছু বিবেচনা করে, যদি সবার সঙ্গে চলা যায়, তাহলে সমস্যা অনেক কম হয়। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে পরিবারের অন্য কারেঅ কোনো সমস্যা হয়। আর বিয়ের পরে যদি আমি, আমার, আমাকে এভাবে না ভেবে যদি আমাদের বলে ভাবে তবে আর কোনো সমস্যা থাকে না। বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হলে প্রয়োজন যত্নের। এজন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। মানসিক প্রস্তুতির জন্য কাউন্সেলিং করা যেতে পারে।

অন্যদিকে শারীরিকভাবে প্রস্তুতির জন্য লক্ষণীয় বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়ই। অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির মধ্যে পড়ে পরিমিত আহার। ১ কাপ দুধের সাথে ২ চা চামচ কাঁচা হলুদের রস এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে বিয়ের আগে ১ মাস খেলে গায়ের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বিয়ের ৭ দিন আগে থেকে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি যেগুলো শরীরকে উত্তেজিত করে রাখে এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। এ সময় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, সবজি ও পানি খাওয়া প্রয়োজন। ভাজাপোড়া একদম খাওয়া উচিত নয়। এর সাথে প্রয়োজন স্নায়ুচাপ কম রাখা, রাগ কম করা।

ক্রোধ, হিংসা এগুলো একেবারে কম করা। এ সময় মনকে শান্ত রাখতে হবে সেই সঙ্গে প্রতিদিন আটঘণ্টা ঘুমাতে হবে। বিয়ের প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাহ্যিক প্রস্তুতি। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। কারণ বিয়ের কনে হলো একটা গোলাপ ফুল, তাকে সেভাবেই যত্ন করতে হয়। কথায় বলে ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী’। প্রথম দর্শনে যদি কারও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে হয়, তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি ও সেই সঙ্গে ভালো উপস্থাপনা।

নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখলে ত্বক এমনিতেই ভালো থাকে। প্রত্যেকের ত্বকের ধরন একরকম হয় না। তাই ধরন বুঝে কি রকম যত্ন নিতে হবে তারই কিছু টিপস্ নিচে দেওয়া হলো।

ক্লিনজিং : স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধ ও মধু একত্রে মিশিয়ে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। যদি ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে গোলাপ জল ও শসার রস মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তৈলাক্ত ত্বকে যদি ব্রণ থাকে তাহলে তেঁতুল ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এবং মিশ্র ত্বকে ঠাণ্ডা দুধের সাথে মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে ক্লিনজিং এর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্ক্রাবিং : টক দইয়ের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে সপ্তাহে একবার স্ক্রাব করা যেতে পারে। এই স্ক্রাবটি যেকোনো ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মিশ্র ত্বকের জন্য বেসন ও টক দইয়ের মিশ্রণ ভালো কাজ করে।

মাস্কিং : ২ চা চামচ বেসন, ১/২ চা চামচ শসার রস, ১/২ চা চামচ গাজরের রস, ১/২ চা চামচ দুধ, ১/২ চা চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। গ্লো ফিরিয়ে আনতে যে কোনো ধরনের ত্বকে এটি ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ২ চা চামচ বেসনের সঙ্গে ১/২ চা

চামচ শসার রস, ১/২ চা চামচ টমেটোর রস, ১ চা চামচ টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

ময়েশ্চারাইজিং : ত্বক পরিষ্কার রাখার মতো জরুরি ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করা। গোলাপ জল, গ্লিসারিন এবং তিলের তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে বোতলে রেখে দিলে প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়।

হাত ও পায়ের যত্ন: সপ্তাহে ১ দিন লেবুর রসের সাথে ছোট দানার চিনি মিশিয়ে পুরো হাত ও পায়ে ঘষুন। ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে হাত ও পায়ের ত্বক উজ্জল হবে পরে মুলতানি মাটি গোলাপ জলে মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে লাগাতে পারেন। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। হাত ও পায়ের ত্বক শুষ্ক হলে অলিভ অয়েল, গোলাপ জল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এটি ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করবে।

চুলের যত্ন : অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল হালকা গরম করে সপ্তাহে ২ দিন পুরো মাথায় ম্যাসাজ করে নিন। যদি খুশকি থাকে তাহলে তেলের সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।

মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন সকালে ভেজানো মেথির সাথে একটি কলা, একটি ডিম, দুইটা আমলকি, ১ চা চামচ কফি পাউডার, ২ চা চামচ মেহেদি পাতা বাটা একত্রে নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করুন।

তথ্য সহায়তা: হারমনি স্পা ও ক্লিওপেট্রা।

সূত্র: মানবকণ্ঠ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন