বিয়ের আগে যেগুলো জানা দরকার


সুরাইয়া নাজনীন

বিয়ে দুটি মানুষের মধ্যে হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাদের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের হাত ধরেই গড়ে ওঠে নতুন একটি পরিবার, নতুন একটি প্রজন্ম। তাদের নতুন পরিবারটি কেমন হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রীর ওপর। তাদের যদি কোনো ভালো গুণ থাকে তাহলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তারা তাদের সেইসব ভালো গুণ দিয়ে গড়ে তুলবেন। আর যদি তাদের কোনো খারাপ গুণ থাকে তাহলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আপনা আপনি সেইসব গুণ রপ্ত করে তাদের জীবন গড়ে তুলবে। তেমনিভাবে পিতা-মাতার যদি বিয়ের আগে কোনো মারাত্মক রোগ থাকে তাহলে বিয়ে পরবর্তী সময়ে সেই রোগের প্রভাব স্বামী, স্ত্রী ও পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও পড়ে। তাই বিয়ে করার আগে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।

প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করার ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের স্বাস্থ্যেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা পরবর্তীতে সন্তানের ওপরও পড়ে। তাই বিয়ে করার পূর্বে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বয়স ভালো করে যাচাই করে নেওয়া দরকার। মেয়েদের ক্ষেত্রে নিয়মিত মাসিক হওয়া, হেপাটাইটিসসহ অন্যান্য সব ধরনের টিকা দেওয়া আছে কিনা এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে বিড়ি-সিগারেট, মদ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস আছে কিনা তা আগে থেকেই জেনে নেয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তা পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি ও এর কুফল পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও পড়ে। এছাড়া শারীরিক উচ্চতা, রক্তচাপ, ওজন এসব দিকও সম গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার।

বয়স: বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বেশি বয়সে বিয়ে করার ফলে ছেলেদের ইনফার্টিলিটি অথবা বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান মানসিক ও শারীরিক ত্রুটিসহ প্রতিবন্ধীও হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ত্রিশ বছরের পর মেয়েদের প্রথম সন্তান নেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব দিক বিবেচনা করে বিয়ের আগে বয়সের দিকটা ভালো করে বিবেচনা করতে হবে। কেননা এর সাথে আগামী প্রজন্মের ভাগ্যও জড়িত। বয়সের দিক ভাবতে গিয়ে অতি অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। কম বয়সে মেয়েদের গর্ভধারণ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

অল্প বয়সে সন্তান ধারণের ফলে আমাদের দেশে অনেক মেয়ের অকালমৃত্যু ঘটছে। এছাড়া ছেলে-মেয়ের বয়সের পার্থক্যের দিকটিও সমানভাবে নজড় দিতে হবে। ছেলে ও মেয়ের বয়সের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে পরবর্তীতে সংসার জীবনে একে অপরের বোঝাপড়াটা ঠিকমতো হয় না। যার ফলে সংসারের নানা ধরনের অশান্তি লেগেই থাকে। তাই সবদিক বিবেচনা করে বিয়ের আগে এই বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

বন্ধ্যাত্ব: আমাদের দেশে অসংখ্য নারী ও পুরুষ বন্ধ্যত্ব নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। এনিয়ে সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কারও রয়েছে। আদতে যৌন অক্ষমতা, অ্যাজোসপারমিয়া এবং সন্তান ধারণে অক্ষমতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্ধ্যত্ব পুরুষ ও নারী উভয়েরই হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা পরবর্তীতে সংসার জীবনে নানা ধরনের অশান্তির সৃষ্টি করে। আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনে বিয়ের আগে এই ধরনের কোনো পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না থাকলে আপাতদৃষ্টিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

রক্তরোগ: একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে রোগ জীবাণু ছড়ানোর একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রক্ত। এটির মাধ্যমে সহজেই রোগজীবাণু একাধিক দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই বিয়ের আগে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। সাধারণত যাদের রক্তে আরএইচ (জঐ) ফ্যাক্টর নেই তারা নেগেটিভ গ্রুপের রক্তধারী। যেমন- এ নেগেটিভ, এবি নেগেটিভ। পজিটিভ রক্তধারী কোনো পুরুষের সাথে যদি এই নেগেটিভ রক্তধারী কোনো মহিলার বিয়ে হয় তাহলে সন্তান জন্মদানের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। যেমন- অকাল গর্ভপাত হওয়া, শিশুর মৃত্যু হওয়া, জন্মগ্রহণকারী শিশুর হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। এসব অনাহূত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রজন্মগত রোগ: রোগের জীবাণু বহনকারী পুরুষ ও মহিলার ঔরসজাত সন্তানও জন্মের সময় মায়ের গর্ভ থেকেই সেই রোগের জীবাণু নিজের শরীরে বহন করে নিয়ে আসে। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার মাঝে প্রকাশ পেতে থাকে। সাধারণত মা-বাবা দুজনের অথবা যে কোনো একজনের জিন থেকে সন্তান এই রোগের ধারক হন। বংশগত রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, মৃগী, ডিপ্রেশন, কার্ডিওভাসকুলার ডিজেস, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার যেমন, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, আর্থাইট্রিস, গ্লকোমা, ওবেসিটি, অস্টিওপোরেসিস, অ্যাজমা, মানসিক অসুস্থতা প্রভৃতি।

যৌন রোগ: নারী বা পুরুষের পূর্বে কোনো যৌন রোগ থাকলে বিয়ের পর তাদের শারীরিক সম্পর্কের ফলে ওই রোগের জীবাণু একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে মিশে যায়। সিফিলিস, গনোরিয়া, স্যানক্রয়েড, জেনিটাল হারপিসসহ মরণঘাতী এইডসও এই প্রক্রিয়ায় একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। পরবর্তীতে এসব রোগের প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও পড়ে।

সূত্র: মানবকণ্ঠ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন