
জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। বড় বিচিত্র সেসব নাম—জাম্বুল, জাম্বু, জাম্বুলা, জামুন, জাম্বোলান, ড্যামসন প্লাম, ডুহাট প্লাম, জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি। ছোট মরিচে যেমন ঝাল বেশি, তেমনি ছোট এই ফলে পুষ্টি ষোলো আনা। জামে শর্করার পরিমাণ থাকে প্রায় ১৫ দশমিক ৫৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ গ্রাম। জাম আরও কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ। এপ্রিলে জামগাছে ফুল ধরে। আর মে-জুনে এসে জাম পরিপক্ব হতে শুরু করে। বর্ষাজুড়েই ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে থাকে জাম।
এ ছাড়াও রয়েছে জামের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম উপকারী। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জাম ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখে। এক চা চামচ জামের বিচির গুঁড়া খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ভিটামিন সি:
জামে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি ভিটামিন সি অভাবজনিত কারণে রোগবালাই প্রতিরোধসহ ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জাম উপকারী।
রক্তস্বল্পতা দূর করে:
জামে থাকা পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠাণ্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে ভূমিকা রাখে। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে:
জাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এ ছাড়া শরীরের দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় জাম।
স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখে:
জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ আছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে:
জামে ক্যালরির পরিমাণ কম। যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত কিংবা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন জাম।
উচ্চ রক্তচাপ:
আজকাল উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাজা ফল এবং শাকসবজি খেতে বলেন। এ ক্ষেত্রে জাম উপকারী। জামে এমন সব উপাদান আছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে করে:
মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জাম। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান থাকে, তার মধ্যে জামে আছে সবচেয়ে বেশি। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে।
ত্বকের সমস্যায়:
জামে আছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক এসিড ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
জাম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকেও মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যার। রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। এবং রুচি ফিরিয়ে আনতে জাম খেতে পারেন। আর ভ্রমণজনিত বমিভাবও দূর করে এই ফল।
সূত্র:- সুখবর বাংলা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন