
ফাইল ছবি
হার্ট অ্যাটাক শব্দটির সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। মানবদেহের জটিল রোগগুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। যাতে চরম মাত্রায় রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকি। হার্ট অ্যাটাকের কারণে অকালে হারিয়ে ফেলতে হয় অনেক স্বজনদের। কি কি কারণে হার্ট অ্যাটাক হয় সেটি জানা থাকলে আগে থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া সম্ভব। এছাড়া, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ জানলে আগেভাগেই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। ডক্টর টিভির সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিছা নওশীন।
ডক্টর টিভি: আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন ?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুল্লিাহ ভালো আছি।
ডক্টর টিভি: হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে কিছু বলুন ?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে হার্টের রক্তনালীর একটা রোগ। যেখানে হার্টের রক্তনালীর ভেতরে চর্বি জমে, সেখানে প্লাগ হয়। রক্ত নালী বন্ধ হয়ে হার্টের মাংসপেশীতে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং হাটের্র মাংসপেশী মারা যায়। হার্টের একটা অংশ যখন মারা যায় বা ড্যামেজ হয়ে যায়, সেটাকে আমরা বলি হার্ট অ্যাটাক ।
ডক্টর টিভি: একজন রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে সেটা কিভাবে বোঝা যায়?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হার্ট অ্যাটাকের কারণ হচ্ছে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর এই রক্তনালী বন্ধ হয়ে যখন হার্ট অ্যাটাক হয় তখন মানুষ বুঝতে পারে। তার বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকে চাপ অনুভব হতে পারে। তার সাথে ঘাম দিতে পারে এমনকি বুকের ব্যথাটা বাম দিকে চলে যেতে পারে। গলায় বা পিঠে চলে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডান দিকের রক্তনালীতে ব্লক হলে, পেটের দিকেও ব্যথা হতে পারে। তীব্র ব্যথা। রোগী মনে করবে, আমি মারা যাচ্ছি। রোগীর প্রেশার কমে যেতে পারে, কাশি হতে পারে। এ রকম উপসর্গ নিয়ে রোগী হাসপাতালে আসতে পারেন।
ডক্টর টিভি: কি কি কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হার্ট অ্যাটাকের ব্যাপারটা এরকম নয় যে, একটা নির্দিষ্ট কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়। এই রোগটাকে বলা হয় মাল্টিফ্যাক্টিরিয়াল ডিজিস। তার মানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর এই রোগের সাথে জড়িত। কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। যেমন, যাদের পরিবারে হার্টের রোগ আছে। বাবা—মা, ভাই—বোন বা রক্ত সম্পর্কের একটা জেনেটিক বা বংশগত রিস্ক ফ্যাক্টর। সেটা থেকেই যাবে। সেটা আমরা পরির্বতন করতে পারবো না। কিন্তু কিছুকিছু পরিবর্তনশীল ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরস আছে যেগুলোর কারণে সময়ের আগেই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। রক্তনালীতে চর্বি জমে সেখানে ব্লক তৈরি হতে পারে। এছাড়া প্রধান চারটি কারণে হার্টঅ্যাটাক হতে পারে। উচ্চমাত্রায় ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ। ডায়াবেটিস বা রক্তের গ্লকোজ বেড়ে যাওয়া। তারপরে ধুমপান এবং রক্তের কণিকায় কোলেস্ট্ররেল বা রক্তের কণিকায় চর্বির মাত্রা বেশি থাকলে। এ কারণগুলো থাকলে আমরা কিছুটা পরিবর্তন করতে পারি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। রক্তের গ্লকোজ চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ধুমপান কিংবা রক্তের যে কোলেস্ট্ররেলের মাত্রা সেটিও ওষুধ দিয়ে এবং ডায়েটগত অভ্যাসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ডক্টর টিভি: বাম হাত ও পা এবং মাঝেমধ্যে বাম পিঠে চিনচিন ব্যথা করে। তাতে কি হার্টের কোনো সমস্যা হতে পারে?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হ্যাঁ, বুকের বাম পাশে বা বুকের মাঝখানে যদি ব্যথা করে, চিনচিন করে, এটা হার্টের সমস্যা হতে পারে। তবে পায়ের সমস্যা বা পায়ে ব্যথার সাথে হার্টের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একটা ইসিজি করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিনের ডাক্তারকে যদি আপনি দেখান এবং একটা ইকু কার্ডিওগ্রাফি করেন, প্রয়োজনে একটা ইটিটি করে নিতে পারেন। যদি আপনার ইকু এবং ইসিজি নরমালও থাকে আপনার কিন্তু হার্টের সমস্যা হতে পারে।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ।
সূত্র: ডক্টর টিভি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন