
মানুষের সৌন্দর্য্য বিচারে দর্শনধারীর একটা প্রাথমিক ভূমিকা থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে তার গ্রহণযোগ্যতা খুবই ক্ষণস্থায়ী। মানুষের জীবন অনেকটা ফলদায়ী বৃক্ষের মতো। যার পরিচয় তার অমসৃণ বহিরাবরণ বা চামড়ায় নয়, সুমিষ্ট ফলে। ঠিক তেমনি, মানুষের সৌন্দর্য্য কেবল তার শরীরের আকার-আকৃতি বা রংয়ের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে তার সুন্দর ব্যক্তিত্ব এবং গুণাবলীর উপর। সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারীরা সমাজের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকে।
তবে ব্যক্তিত্ব গঠন করা কিন্তু মোটেও কোনো সহজ ব্যাপার নয়। এটা সুন্দর চরিত্র, জ্ঞান, বুদ্ধি-বিবেচনা, প্রজ্ঞা, রুচিবোধ ইত্যাদির সংমিশ্রণে নিরন্তন চর্চার দ্বারা অর্জন করতে হয়। সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে গেলে প্রাত্যহিক জীবনযাপন এবং চালচলনেও বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি সবসময় খেয়াল রাখা উচিত। যা আপনার ব্যক্তিত্বকে আরো বেশি প্রস্ফুটিত করে তোলে। যেমন-
পোশাক নির্বাচনে সতর্কতা
নিজের পেশা, বয়স এবং শরীরের গঠনের প্রতি লক্ষ্য রেখে মানানসই পোশাক নির্বাচন করুন। হাল ফ্যাশনের স্রোতে গা ভাসাবেন না। কেননা, সঠিক পোশাক আপনার ব্যক্তিত্বকে যেমন ফুটিয়ে তুলতে পারে, তেমনি ভুলভাল পোশাক নির্বাচন আপনার ব্যক্তিত্বকে মারাত্মকভাবে খর্ব করে আপনাকে হাস্যাস্পদ হিসেবেও উপস্থাপন করতে পারে।
পরিবেশ এবং স্থানভেদেও পোশাকের ভিন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখুন। বিয়েবাড়ি, অফিস, শোকসভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
আর একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, শালীন পোশাক আপনার রুচিবোধের পরিচয় বহন করে এবং আপনার ব্যক্তিত্বকে সর্বাংশে ফুটিয়ে তোলে।
আত্মবিশ্বাস রাখুন সবসময়
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। কেননা আত্মবিশ্বাসই পারবে আপনাকে সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দিতে। আর সাফল্য আপনার ব্যক্তিত্বকে করে তুলবে আরও ধারালো। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কখনোই ব্যক্তিত্ববান হয়ে ওঠা যায় না। তাই উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চাইলে নিজের উপর বিশ্বাস জোরদার করুন।
সামাজিক হোন, অন্তর্মুখীতা পরিহার করুন
আমরা অনেকেই ভেবে থাকি যিনি যত বেশি গোমড়ামুখো এবং বদমেজাজী তিনি তত বেশি ব্যক্তিত্ববান। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল। বাস্তবে বরং তা একেবারেই উল্টো। কেননা এধরনের মানুষ সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পাওয়ার বদলে অন্যের বিরক্তির কারণই হন সবচেয়ে বেশি। এদেরকে এড়িয়ে চলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সবাই। এছাড়া তাদের চেনাজানার গণ্ডিটাও হয় খুব সংকীর্ণ।
তাই সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক হতে হবে। মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন, পরিচিত হোন, দেখা হলে সালাম দিন, কুশলাদি বিনিময় করুন। এতে আপনার পরিচিতি বাড়তে থাকবে এবং আপনার প্রতি সমাজের একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব ধীরে ধীরে আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ইতিবাচক চিন্তা করুন
ইতিবাচক চিন্তা মানুষের জীবনীশক্তিকে চাঙ্গা রাখে। জীবনের সার্বিক সফলতার ক্ষেত্রে যা একান্তভাবে জরুরি। অন্যদিকে নেতিবাচক চিন্তা ধীরে ধীরে প্রাণশক্তিকে ক্ষয় করে ফেলে। নষ্ট করে দেয় মানুষের সহজ সম্ভাবনাকেও। তাই নেতিবাচক চিন্তা থেকে সবসময় নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। ইতিবাচক চিন্তা করুন। ইতিবাচক চিন্তা আপনার জীবন ও চলার পথকে সহজ করে তুলবে এবং ফুটিয়ে তুলবে আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্ব।
কথা ও কাজে মিল রাখুন
ব্যক্তিত্ববান মানুষের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কথা ও কাজের মিল রেখে চলা। যে কাজটি আপনার পক্ষে করা সম্ভব না সেটা বলবেন না। সবসময় চেষ্টা করুন কথা ও কাজে মিল রাখতে। তাহলেই নিজেকে আপনি ব্যক্তিত্ববান হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলুন
সুন্দর বাচনভঙ্গি মানুষের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তাই ব্যক্তিত্ববান হতে চাইলে সুন্দর বাচনভঙ্গির প্রতি যত্নশীল হোন। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা, স্পষ্ট উচ্চারণ, কথা বলার সময় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা এবং ভাবপ্রকাশের দিকে লক্ষ্য রাখুন। এতে আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্বের বহি:প্রকাশ ঘটবে।
সূত্র: মানবকণ্ঠ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন