 |
| বয়সের নানা ধাপে সাজগোজ |
নারীর সাজ এক শৈল্পিক ক্যানভাসের প্রতিচ্ছবি। সাজের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব, রুচিবোধ এবং শিল্পের প্রকাশ। এক্ষেত্রে বয়সটা প্রভাব বিস্তারকারী একটি বিষয়। বিশেষজ্ঞরাও ঠিক এভাবেই ভাবেন। এবার বয়সের তিন ধাপের সাজগোজ এবং ভালো থাকার দারুণ পরামর্শ দিয়েছেন বিউটি এক্সপার্টরা। সাজগোজ নিয়ে লিখেছেন- সুরাইয়া নাজনীন।
বয়স যখন ১৮: এই বয়সটা কিশোর বয়স। এ সময় তেমন সাজগোজের প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়ে হারমনি স্পা ও ক্লিওপেট্রার কর্ণধার ও নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট রাহিমা সুলতানারও একই মত। ‘তিনি বলেন, ১৮ বয়সটা ঝরঝরে একটা সময়। এ সময় তারা এমনিতেই কোমল, মোহনীয় থাকে। তাদের স্কিনটোন থাকে একেবারে ন্যাচারাল। তাই কোনোকিছু দিয়ে ঢাকার প্রয়োজন পড়ে না। তবুও রোদে বের হলে সানবøক মেখে নিতে পারে। আর কোনো অনুষ্ঠান হলে তখন হালকা মেকআপ যেমন ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার, ড্রেস ম্যাচিং করে বøাশন লাগিয়ে নিতে পারে। চোখে চিকন করে কাজল আর একদম লাইট কালারের লিপস্টিক কিংবা লিপগøস মানানসই লাগবে। আর চুলের নানা রকম স্টাইল করতেই পারে ১৮তে। তবে ফেস বুঝে মানানসই কাট দিতে হবে। ওদের পছন্দকেও প্রায়োরিটি দেয়া উচিত।’
এই বয়সে তো মেয়েদের স্কিনে নানা রকম সমস্যা দেখা যায় যেমন ব্রণটা বেশি, এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওদের তো উঠতি বয়স, এ সময় একটু-আধটু ব্রণ উঠবেই কিন্তু এটা সাময়িক। প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার আগে-পরে এটা বেশি দেখা যায়। তবে ব্রণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদি খুব বেশি দেখা দেয় তাহলে লবঙ্গ এবং নিমপাতার পেস্ট লাগালে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। তবে ওদের জন্য আমার পরামর্শ হলো ব্যালান্স মিল্ক খেতে হবে নিয়মিত। জাঙ্কফুড অ্যাভয়েট করতে হবে। ওজন ঠিক রাখাটাও জরুরি। এসব মেনে চললেই ওরা একদম ফিট থাকতে পারবে।
বয়স যখন ২৫: ছিমছাম সাজই মানাবে কর্মজীবী নারীর জন্য। সচেতন থাকতে হবে চুলের সাজ ও মেকআপের ব্যাপারে। এ বিষয়ে কথা হয় রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত জীবনযাপনে অভ্যস্তদের সাজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে নিয়মিত। সময় নিয়ে করতে হবে ত্বকের পরিচর্যা। আর বাইরে বের হওয়ার সময় মেকআপের বেজের প্রতি রাখতে হবে নজর। হালকা মেকআপে স্নিগ্ধতা তাদের করে তুলবে অতুলনীয়। চোখে কাজল পরতে হবে। সেই সঙ্গে মাশকারা। মানানসই রঙের লিপস্টিকে সাজতে হবে। চুল খোলা রাখা যেতে পারে, তবে কাজের সময় বেঁধে রাখলে বেশ স্বস্তি মিলবে। চলাফেরায় আসবে স্বাচ্ছন্দ্য। গয়না পরতে হবে হালকা। হাতে থাকবে রুচিশীল ঘড়ি। তবে অফিসে যাওয়ার সময় আরেকটি জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সেটা হলো জুতা নির্বাচন।
তবে জুতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্যাশন বজায় থাকে এবং আরামদায়ক হয় এমন জুতা নির্বাচন করাই ভালো। তাছাড়া শব্দ সৃষ্টি হয় কর্মক্ষেত্রে এমন জুতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ এতে অফিসের কাজে বিঘ্ন হতে পারে। নিজের মানানসই লুকের দিকে একটু সচেতন থাকলেই আপনি সহজে অফিসের সাজের জন্য নিজেকে পারফেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। আর অফিসে আপনার উপস্থিতি সবার জন্য স্বস্তিদায়ক করার জন্য অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করুন। তবে সুগন্ধি ব্যবহারে সচেতন থাকবেন। দিনের বেলা হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করাই ভালো। পছন্দ অনুযায়ী পারফিউম বা বডি স্প্রে হাতের কাছেই রাখুন।’ ২৫ নিয়ে রাহিমা সুলতানা বলেন, দিনের মধ্যে অন্তত ১৫ মিনিট নিজেকে সময় দিন। কাজের জন্য বাস্তবধর্মী রুটিন তৈরি করুন। ঠিক সময়ে ব্রেক নিন। এই বয়সে পা দেয়ার আগে নিজের ত্বকের প্রতি যত্নশীল হোন। এ বয়সে অনেকের চুল পড়তে শুরু করে। তবে ২ মাসের বেশি চুল পড়লে তখন যত্ন নেয়া একান্ত জরুরি। ব্যালান্স ডায়েট করতে হবে। নিয়মিত দরকার এক্সারসাইজ। দিনে দেড় গøাস দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খান। এই বয়সে পুরুষের তুলনায় একজন নারীর আয়রনের প্রয়োজনীয়তা থাকে। তাই বেশি আয়রনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।’
বয়স যখন ৪০: বয়সের এই ধাপটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় নিজের প্রতি অনেক বেশি যতœশীল হতে হয়। স্কিন ট্রিটমেন্ট খুব জরুরি হয়ে পড়ে। ৪০-এ মেকাপের বেজটা আসল। ত্বক বুঝে ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ফেস পাউডার, বøাশন সঠিক উপায়ে লাগাতে হবে। চোখের সাজটা খুব বেশি ভারি না করলেও চলে। তবে ডার্ক কালারের লিপস্টিক লাগানো যেতে পারে কিন্তু নিত্যদিনের জন্য হালকাটাই মানানসই হবে। চুল ফেস বুঝে ইউ কিংবা লং লেয়ার করা যেতে পারে। অনুষঙ্গ হতে পারে পার্লের গয়না পোশাক বুঝে, সঙ্গে ক্লস ব্যাগ বেশ ভালো লাগবে বললেন আফরোজা পারভীন। ৪০ নিয়ে কথা হলো রাহিমা সুলতানার সঙ্গেও তিনি বলেন, এই বয়সেই ইস্ট্রোজেন হরমোনের সক্রিয়তা কমে যায়। মেনোপজ হওয়ার আগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। চেহারায় তার ছাপ পড়তে থাকে এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে। সংসারের নানা দায়িত্বের চাপে নিজেকে হারাতে দেবেন না। সময় নিন, যত্ন করুন নিজেকেও।
সূত্র: মানবকণ্ঠ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন