নামায কায়েম কর, নামাযকে বিনষ্ট করিও না। নামায বিনষ্ট করার দুটো অর্থ হতে পারে, এক, নামাযই আদায় না করা। তারমানে ব্যক্তি নামাযকে বিনষ্ট করে দিলো, আর হাদীসে এটাকে কূফর বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় অর্থ হলো, ব্যক্তি নামায পড়ে কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর তরিকা ও উনার সুন্নাত মুতাবেক পড়ে না। সুতরাং সেও তার নামাযকে বিনষ্ট করল, এবং সেও তার নামাযকে বরবাদ করে দিলো। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন --- " কিয়ামাতের পূর্বে মসজিদগুলো (মুসল্লী দ্বারা) পূর্ণ থাকবে, (মসজিদ সমূহে) নামাযীদের আবাদ থাকবে কিন্তু বেশিরভাগ মুসল্লী হবে তারা --- যারা নামায পড়েও কোন সাওয়াব পাবে না।" কেন? কারণ তাদের নামায রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সুন্নাতের খেলাফ হবে। অথচ এখানে ফরয কি ছিল, হুকুম কি ছিল? হুকুম ছিল ---
صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ،
অর্থাৎ, তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর, যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখছ’! --- [১]।
হে আমার ভাই, এটা কোন তুচ্ছ বিষয় নয়। আমরা স্রেফ একথা বলেই ক্ষান্ত হয়ে যাই --- উমুক ব্যক্তি অন্তত নামায তো পড়ে, মসজিদে তো আসে, যেভাবেই পড়ে পড়ুক --- এগুলো সবই কবুলযোগ্য! না, মোটেও এগুলো কবুলযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কর্তৃক নামাযের একটিই তরিকা বর্ণিত হয়েছে আর সেই তরিকা-ই শিখো। এজন্যই সহীহ বুখারীর প্রসঙ্গ আনতে হয়, পুরো দুনিয়ার সকল উলামায়ে-কেরাম এব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর কিতাব তথা আল-ক্বুর'আন এর পরে সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব হল 'সহীহ বুখারী। কারো কি কখনো এই তাউফীক হয়েছে অন্তত একবার বুখারী খুলে নিজের নামাযের (তরিকা) চেক করে দেখবার যে, আমার নামাযটা রাসূলের সুন্নাত মুতাবেক হচ্ছে নাকি এর বিপরীত!? দুনিয়াতে অনেক প্রসিদ্ধ লাভ অথবা দুনিয়া কামানোর জন্য সাত সমুদ্র পাড়ি দেই, জন্মভূমি ছেড়ে চলে যাই, বাচ্চাদের ছেড়ে যাই, মা-বাবাকেও ছেড়ে যাই --- দুনিয়াকে খুব করে কামাই, অনেক যত্নশীল হয়ে কামাই। আর দুনিয়ার জিনিসপাতি ঘরে মওজুদ থাকে, টিভি মওজুদ থাকে, ঘরের ছাদে আন্টিনারও লাগানো থাকে, কিন্তু যদি ঘরে কিছু না থেকে থাকে, তবে কেবল সহীহ বুখারীটাই থাকেনা। এটা সেই মাজমু'ঊ যাতে স্রেফ রাসূল (ﷺ)-এর বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, অথচ কেবল এটিই (ঘরে) নেই!
সফলতার চাবিকাঠি হল, ব্যক্তিকে নামায আদায়কারী হতে হবে। আর নামায পড়বেন তো বিলকুল রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সুন্নাত মুতাবেক ও তাঁর দেখানো পদ্ধতিতে পড়বেন। যদি তাঁর তরিকার অনুসরণ না করেন, তাহলে জেনে রাখুন --- আমরা তো অতি-সাধারণ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত, খোদ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জামানায় একজন সাহাবী মাত্র একটা সুন্নাতের খেলাফ নামায আদায় করেছিল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছিলেন, "তোমার নামায হয়নি, দ্বিতীয়বার পড়।" সে পূনরায় পড়ল, তিনি বলেন, এটাও হয়নি। সে আবারও পড়ল, প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, এবারও হয়নি।" (এর দ্বারা) সে শিখলো এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-ও তাকে শিখালেন --- যার অর্থ হল এটা আম মাস'আলা, আর এর প্রতি (বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে নামায শেখার) গুরুত্ব দেয়া উচিত।❞
--- আল্লামাহ্ আব্দুল্লাহ্ নাসের রাহমানী (হাফিযাহুল্লাহ্)।
গৃহীত:
.
.
তথ্যসূত্র:
.
১. --- [বুখারী, ৬৩১; মিশকাত, ৬৮৩]।
.
.
.
--- অনুবাদক: আখতার বিন আমীর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন