তোওবা ও ইস্তিগফারের জন্য দুয়া কখন, কিভাবে পড়তে হয়?



 (১) তোওবা ও ইস্তিগফারের জন্য সবচাইতে ছোট দুয়াঃ প্রতিদিন অন্তত ৭০ বা ১০০ বার

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর বারের চাইতে বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” সহীহ বুখারীঃ ৬৩০৭।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “হে মানুষেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তোওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশত বার তোওবা করি।” সহীহ মুসলিমঃ ২৭০২।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “নিশ্চয় আমার অন্তরেও ঢাকনা এসে পড়ে, আর আমি দৈনিক আল্লাহর কাছে একশত বার ক্ষমা প্রার্থনা করি।” মুসলিমঃ ২৭০২।
ইবনুল আসীর রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীষের ব্যাখ্যায় বলেন, “উল্লেখিত হাদীষে «ليُغان على قلبي» কথাটির অর্থ হচ্ছে, ঢাকা পড়ে যায় বা পর্দাবৃত হয়ে যায়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ ভুলে যাওয়া। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা যিকির, নৈকট্য ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকতেন। তাই যখন কোনো সময় এ ব্যাপারে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটত অথবা ভুলে যেতেন, তখনি তিনি এটাকে নিজের জন্য গুনাহ বলে মনে করতেন আর সাথে সাথে তিনি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার দিকে দ্রুত ধাবিত হতেন।” জামিউল উসূলঃ ৪/৩৮৬।

(২) তোওবা ও ইস্তিগফারের জন্য শ্রেষ্ঠ দুয়াঃ প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় একবার
“সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার” বা ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য শ্রেষ্ঠ দুয়া, এই নামে একটা দুয়া আছে। এই দুয়াটার প্রতিটা কথা আন্তরিক বিশ্বাসের যদি কোন ব্যক্তি সকালবেলা (ফযরের পর) ও সন্ধ্যা বেলায় (আসর কিংবা মাগরিবের পর) এই দুয়া পড়ে আর আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন এই আশা অন্তরে রাখে, তাহলে ইনশাআল্লাহ সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুয়াটা ‘হিসনুল মুসলিম’ বইয়ের ১২৭-নং পৃষ্ঠায় দেওয়া আছে। দুয়াটা হচ্ছে -
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আংতা রব্বি লা- ইলাহা ইল্লা আংত। খলাক্বতানি ওয়া আনা আ’বদুক। ওয়া আনা আ’লা আহ’দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাস্তা-তোয়া’ত। আ’উযুবিকা মিং শাররি মা-সানাআ’ত। আবু-উ-লাকা বিনি’মাতিকা আলাই, ওয়া-আবু-উ-বি-যামবি ফাগফিরলী ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয-যুনুবা ইল্লা-আংত।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আর আমি হচ্ছি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছি তা পূরণ করার চেষ্টায় রত আছি। আমি আমার কৃত খারাপ কাজের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার প্রতি তোমার প্রদত্ত যে নিয়ামত, আমি তার স্বীকৃতি জ্ঞাপন করছি। আমি আরো স্বীকার করছি যে, আমার পাপে আমি অপরাধী। সুতরাং, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয় তুমি ছাড়া ক্ষমা করার মতো আর কেউ নেই।
শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠতম দোয়া) হল বান্দার এই বলা যে, (আল্লা-হুম্মা আংতা রাব্বি. . .শেষ পর্যন্ত)। যে ব্যক্তি দিনে (সকাল বেলায়) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুয়াটি পড়বে, অতঃপর সে যদি সেই দিনে সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (সন্ধ্যাবেলায়) এই দুয়াটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়ে, অতঃপর সে যদি সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জান্নাতীদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবে।” সহীহ বুখারীঃ ৬৩০৬, তিরমিযীঃ ৩৩৯৩, নাসায়ী।

(৩) তোওবা ও ইস্তিগফারের জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা যেই দুয়া আদম ও হাওয়া আ’লাইহিস সালামকে শিক্ষা দিয়েছিলেনঃ
আমাদের আদিপিতা আদম ও আদিমাতা হা’ওয়্যা আ’লাইহিস সালাম শয়তানের কুমন্ত্রনায় নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিষেধ অমান্য করেছিলেন। তখন ক্ষমা প্রার্থনা ও তোওবা করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা তাঁদের দুইজনকে নীচের এই দুয়াটি শিক্ষা দিয়েছিলেন যা ক্বুরআনের সুরা আল-আ’রাফের ২৩-নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এই দুয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআ’লা তাঁদের দুইজনকে ক্ষমা করে দেন। সুতরাং আমাদের উচিত তাঁদের মতো আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নিয়মিত এই দুয়া করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণঃ রব্বানা যলামনা আং-ফুসানা ওয়া-ইল্লাম তাগ-ফিরলানা ওয়াতার হা’মনা লানা কুনান্না মিনাল খসিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। অতএব তুমি যদি আমদেরকে ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব। সুরা আল-আ’রাফঃ ২৩।

(৪) যেই দুয়া পড়লে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামীর মতো বড় গুনাহ মাফ হয়ঃ
যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তোওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ
উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূম, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আর আমি তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, এমনকি যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়।” হিসনুল মুসলিমঃ ২৮৬, তিরমিযীঃ ৪/৬৯, আবু দাউদঃ ২/৮৫, হাদীস সহীহ।
হাদীসের অর্থ হচ্ছে, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয় আর এই দুয়া পড়ে তোওবা করে, তবুও আল্লাহ তাআ’লা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, সুবহা’নাল্লাহ!

(৫) সিজদার সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সুন্দর একটি দুয়াঃ
দুয়া কবুলের জন্য শ্রেষ্ঠ একটি সময় হচ্ছে নামাযের সিজদার সময়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বান্দা সিজদার সময়ে স্বীয় প্রভুর সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। সুতরাং, তোমরা (ঐ অবস্থায়) অধিক মাত্রায় দুয়া কর।” সহীহ মুসলিমঃ ৪৮২, নাসায়ীঃ ১১৩৭, আবু দাউদঃ ৮৭৫, আহমাদঃ ৯১৬৫।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদার সময়ে এই দুয়া বলে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেনঃ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَّتَهُ وَسِرَّهُ».
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু, ওয়া আ’লানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও, ছোট গুনাহ, বড় গুনাহ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য এবং গোপন গুনাহ। সহীহ মুসলিমঃ ৪৮৩।
আপনারা ফরয, সুন্নত বা নফল নামাযের যেকোন সিজদাতে নিয়মিত সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পর এই দুয়া যত ইচ্ছা পড়তে পারেন।

(৬) নিজের, পিতা-মাতার এবং সমস্ত মুসলমানদের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ক্বুরআনী দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব আল্লাহ তার আমল নামায় লিখে দেন।” আত-তাবারানী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক্ব বিন আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “এই হাদীসটা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন। যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে সওয়াব পাবে। আপনি কি জানেন, আপনি যদি এই দুয়া করেন, “আয় আল্লাহ! আমার এবং জীবিত ও মৃত সমস্ত মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের সবার গুনাহ আপনি মাফ করে দিন”, তাহলে এর প্রতিদান হিসেবে আপনি কতগুলো সওয়াব পাবেন? এক লাইনের ছোট্ট একটা দুয়া, কিন্তু এর প্রতিদান হিসেবে কত বড় সওয়াব আপনার আমলনামায় লেখা হবে! আদম আ’লাইহিস সালাম থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, এই দুনিয়াতে বসবাসকারী কোটি কোটি মুসলিম সবার জন্য একটি করে সওয়াব হলে, এই একটিমাত্র দুয়ার কারণে আপনার আমলনামায় কোটি কোটি সওয়াব লেখা হবে। অতঃপর আপনি সমস্ত মুসলিমের জন্য হেদায়েত, দ্বীনের উপর দৃঢ়তা, সাহায্য, সফলতা, ফেতনাহ ও বিপদ-আপদ থেকে নিরাপত্তার জন্য দুয়া করবেন। আপনার এই দুয়া যদি আন্তরিক হয়ে থাকে, তাহলে এটা আপনার অন্তরের বিশুদ্ধতা ও মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্য আপনার সত্যিকার মুহব্বতের নিদর্শন।” শায়খের কথা এখানেই সমাপ্ত।
আপনারা নিজের জন্য, নিজের পিতা-মাতার জন্য এবং সমস্ত মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ছোট্ট, সুন্দর এই ক্বুরআনী এই দুয়াটা মুখস্থ করে নিতে পারেনঃ
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণঃ রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হি’সাব।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদার লোকদেরকে আপনি সেইদিন ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। ইব্রাহিমঃ ৪১।

(৭) দ্বীন ও দুনিয়ার সমস্ত কল্যাণের জন্য দুয়ার সমষ্টিঃ
তারিক রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এই হাদীসটি শুনেছেন। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললো, “হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার রব্বের নিকট প্রার্থনা করতে গিয়ে কিভাবে দুয়া করবো?” নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তোমার (দুয়াতে) এইভাবে বলো,
«اللَّهُمَّ اغْفِرِ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي».
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহা’মনী ওয়াহদিনী ওয়া আ’-ফিনী ওয়ারযুক্বনী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করো, আমাকে হেদায়েত দান করো, আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং আমাকে রিযিক দান করো।
অতঃপর, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বৃদ্ধাংগুলি ছাড়া অবশিষ্ট চার আংগুল একত্র করে বলেনঃ এই চারটি দুয়া তোমার দ্বীন ও দুনিয়াকে তোমার জন্য একত্র করবে।
সহীহ মুসলিমঃ ২৬৯৭, মুসনাদে আহমাদঃ ১৫৪৪৮, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ১৩১৮, ইবনে মাজাহ। তাহকীক শায়খ আলবানী বলেছে, হাদীসটি সহীহ।
কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত শিক্ষা দিতেন। অতঃপর এসব কথা দিয়ে দুয়া করার আদেশ দিতেন। সহীহ মুসলিমঃ ৩৬৯৭।

(৮) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের সানাতে এই দুয়া পড়তেনঃ
«اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَدِ».
উচ্চারণ আল্লা-হুম্মা বা-ই’দ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-আ’দতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্‌সালজি ওয়াল মা-ই ওয়াল বারাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করো, যেরূপ দূরত্ব তুমি সৃষ্টি করেছো পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমন পরিষ্কার করো, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করো।
উৎসঃ সহীহ বুখারীঃ ৭৪৪, সহীহ মুসলিমঃ ৫৯৮, ইবনে শায়বাহঃ ১২/১১০।
(৯) লায়লাতুল ক্বদরে তোওবার জন্য বিশেষ দুয়াঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লায়লাতুল ক্বদর, তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বলঃ
اَللهم إنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউ’বুন তুহি’ব্বুল আ’ফওয়া ফাঅ’ফু আ’ন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। মুসনাদে আহমদঃ ৬/১৮২।

(১০) কোন গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়লে তোওবার জন্য নামাযঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যদি কোনো বান্দা কোনো পাপ কাজ করে ফেলে, অতঃপর সে উত্তমরূপে ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দাঁড়িয়ে যায় ও দুই রাকআ’ত (নফল) সালাত আদায় করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” আবু দাউদঃ ১৫২১, তিরমিযীঃ ৪০৬, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(১১) মজলিসে যেই দুয়া পড়তে হয়ঃ
আমরা সকলেই জানি, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে একশ বার “ইস্তিগফার” অর্থাৎ, আল্লাহ তাআ’লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এই কথাটা কারো কাছে আশ্চর্যজনক মনে হলেও এটাই সত্যি যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কবীরাহ গুনাহ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআ’লা রাসুলুল্লাহর আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ ক্বুরআনে আয়াত নাযিল করে পূর্বেই ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা করে দিয়েছেন। তবুও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহ তাআ’লার প্রতি বিনয় ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এতো বেশি ইস্তিগফার করতেন। তবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মজলিসে আরো বেশি ইস্তিগফার করতেন। এমনকি তিনি তাঁর মজলিসে এতো বেশি ইস্তিগফার করতেন যে, বিষয়টি লক্ষ্য করে সাহাবীরা রাসুলুল্লাহ তাঁর মজলিসের এক বৈঠকে কতবার ইস্তিগফার করেন সেটা গণণা করে তার পরিমাণ একশ বার হিসাব করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা বলেন, “গণনা করে দেখা যেত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এক বৈঠক থেকে উঠে যাবার পূর্বে এক শত বার এই দুয়া পড়তেনঃ
«رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الغَفُورُ»
উচ্চারণঃ রব্বিগফির লী ওয়াতুব আ’লাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত-তাউওয়া-বুল গফূর।
অর্থঃ হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে মাফ করুন এবং তাওবাহ কবুল করুন; নিশ্চয় আপনিই তাওবা কবুলকারী ক্ষমাশীল।
উৎসঃ তিরমিযীঃ ৩৪৩৪; ইবন মাজাহঃ ৩৮১৪। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। শব্দটি তিরমিযীর।
(১২) খতমে বৈঠকের দুয়াঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো মজলিসে বসেছেন, অথবা ক্বুরআন তিলাওয়াত করেছেন, অথবা সালাত আদায় করেছেন, তখনই তিনি সেই মজলিসকে কিছু বাক্যের মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন, (আর তা হচ্ছে)
«سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتوبُ إِلَيْكَ»
উচ্চারণঃ সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহা’মদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আংতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি।
নাসাঈ, আ’মালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, পৃ. ১৭৩। ইরওয়াউল গালীলঃ ১/১৩৫, ৩/৯৪।
কোন মজলিস বা বৈঠক শেষে এই দুয়া পড়লে সেই মসজিলে কোন ভুলত্রুটি হলে এই দুয়া তার জন্য কাফফারা হয়ে যায়। এজন্য এই দুয়াটিকে “বৈঠক শেষের কাফফারার দুয়া” বলা হয়।

(১৩) বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পায়খান থেকে বের হতেন তখন বলতেন
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণঃ গুফরানা-ক।
অর্থঃ (হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আবু দাউদঃ ৩০, তিরমিযীঃ ৭। সহীহ, সহীহুল জামিঃ ৪৭০৭।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কেন টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতেন সে বিষয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়।
কোন কোন আলেম বলেছেন, “আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রস্রাব-পায়খানার অবস্থা ব্যতীত সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআ’লার যিকিরে করতেন। ফলে এই অবস্থায় আল্লাহর যিকির পরিত্যাগ করাকে তিনি তাঁর জন্য ত্রুটি বা পাপ গণ্য করে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।”
আবার কোন কোন আলেম বলেছেন, “আল্লাহ তাআ’লা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পেশাব-পায়খানা করার ক্ষমতা দানের মাধ্যমে যে করুণা করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা আদায়ে ত্রুটি হওয়ার জন্য তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। কেননা পেটের ভিতর মল জমা থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগগ্রস্ত হয়। তাই তা বের হওয়া শরীরের পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য একটি অপরিহার্য নিয়ামাত।”
শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, (দ্বিতীয় এই) মতটি অধিকতর সঠিক।”
মিশকাত আল-মাসাবীহর ব্যাখ্যা, পবিত্রতা অধ্যায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন