উন্নত জাতঃ বারি পটল-১,বারি পটল-২ খরিফ মৌসুমে চাষ উপযোগী।
বপনের সময়ঃ আশ্বিন-কার্তিক(মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য নভেম্বর) মাস এবং শীতের শেষে ফাল্গুন-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি- মধ্য এপ্রিল) উপযুক্ত সময়।
চাষপদ্ধতি:মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে। প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার। বেড ও নালা পদ্ধতিতে গাজর চাষ করুন। এতে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাজনক, পরিচর্যা সহজ, এবং সেচের পানির অপচয় কম হয়। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি বীজ বুনলে, লাইন থেকে লাইন ১১০-১১৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ২০-২১ ইঞ্চি দূরে লাগাতে হবে ।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ৮-১০ গ্রাম।
সার ব্যবস্থাপনাঃ সারের নাম
সারের পরিমাণ (প্রতি শতক এর জন্য) গোবর বা কম্পোস্ট ৪০ কেজি,ইউরিয়া ১.২ কেজি,টি এস পি ৮২০ গ্রাম,এমপি ৬১০ গ্রাম,জিপসামর২৪০গ্রাম,ইউরিয়া ছাড়া অবশিষ্ট সকল সার জমি তৈরির সময় অর্ধেক এবং মাদায় অর্ধেক পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২০ দিন পরপর সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। পটলের জমিতে মাচা না দিলে ইউরিয়াসার দেয়া অসুবিধাজনক। সেক্ষেত্রে অর্ধেক ইউরিয়া বেডে এবং বাকী অর্ধেক ইউরিয়া চারা গজানোর ৩০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। পটলের ফলন প্রথম দিকে বাড়তে থাকে পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ফলন একেবারেকমে আসলে মাদার চারপাশ পরিষ্কার করে হালকাভাবে মাটি কুপিয়ে মাদা প্রতি অতিরিক্ত ২০-৩০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০-৩৫ গ্রাম টিএসপি এবং ২০-২৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে গাছে নতুন নতুন ফুল ধরে এবং ফলন অনেক বেড়ে যায়। এভাবে দুবার সার দেয়া যেতে পারে। এলাকা বা মৃত্তিকাভেদে সারের পরিমাণে কম-বেশী হতে পারে।
সেচঃ ফসলের পুরো জীবন কালে মাটিতে রসের মাত্রা ৫০ % এর নিচে নেমে যাবার আগে সেচ দিন। তবে রসের মাত্রা ৫০ % এর এর নিচে গেলে বাড়ন ও ফলন বেশ কমে যাবে। বৃষ্টি বা অতিরিক্ত সেচের পানি জমিতে জমতে দিবেন না।এর পর কোদাল/নিড়ানি দিয়ে মাটির ওপরের চটা ভেঙে দিন ।
আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে।সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ সারিতে বুনতে হবে, যাতে জমির অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করার নালা রাখুন। জমির অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করা ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
পটলের পাতামোড়ানো পোকা কীটনাশক (যেমন কার্বোসালফান গ্রুপের) অথবা হেক্সাকোনাজল জাতীয় (ম্যাকজল) বালাইনাসক প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
থ্রিপস পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন স্মার্টপ্রিড ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
পটলের ডাউনি মিলডিউ এবং গামি স্টেম ব্লাইট রোগ দমনে মেনকোজেব/মেটালেক্সল/সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- সুন্দরি /এগসুল ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পটলের মোজাইক ভাইরাস রোগদমনে জমিতে সাদা মাছি,জাব পোকা দেখা গেলে (বাহক পোকা) স্মার্টপ্রিড কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে৷ ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১১০-১৫০ কেজি।
সংরক্ষনঃ পটল কচি অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত। ফুল ফোটার ১০-১২ দিন পর পটল সংগ্রহের উপযোগী হয়। পটল এমন পর্যায়ে সংগ্রহ করা উচিত যখন ফলটি পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু পরিপক্ক হয়নি।বেশি পাকা ফলের বীজ শক্ত হয়ে যায় এবং খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জাত ও পরিচর্যার উপর পটলের ফলনের তারতম্য হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন