অচিরেই ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে এক নবযুগের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। মুক্তিকামী জনতা চূড়ান্ত বিজয়োল্লাসের অপেক্ষায়। তারপরেও আপনি হতাশ হচ্ছেন কেন? আপনার মনের ভিতরে তৈরি হওয়া ভয় আর শঙ্কা এখনই দূর করে ফেলুন। নিজেকে করে তুলুন আরো সাহসী আর উদ্যমী।দেশ বাঁচানোর এই মুক্তিযুদ্ধে আপনার হারার কোন সুযোগ নেই। আসুন জেনে নেয়া যাক কেন এবং কিভাবে পতন হচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার?
১.সারা দেশকে পুলিশ,বিজিবি,র্যাব দিয়ে অবরুদ্ধ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো সেই জাতীয় নির্বাচনের প্রতি জনগণের নূন্যতম কোন আগ্রহ নাই। শহর থেকে গ্রামে কোথাও নির্বাচনের হাইপ উঠেনি।
জাতীয় নির্বাচনের যে উচ্ছ্বাস বা উদ্দীপনা এটা সাধারণ জনগণ তো দূরে থাকুক বরং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নেই, কারণ তারাও এই নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। এটাই আপনার, আমার সফলতা।
২. যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ সহ যেসব বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আছে তারা তফসিল ঘোষণার পরও বাংলাদেশ স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জোর দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠ নির্বাচনে সরকারের পরিণতি জেনে তারা এদের কথা কর্ণপাত না করে একতরফা ভোটের দিকে ধাবিত হয়ে দেশকে কম্বোডিয়া, আফ্রিকার সুদান বা উগান্ডার দিকে নিয়ে যেতে যাচ্ছে। ভোটের মহোৎসবকে চিরতরে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে চলেছে। নিশ্চিত থাকুন এই ভুয়া ভোট ও জনগনের গণতন্ত্র হরণের জন্য হাসিনা ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবেন।
৩. চীন-রাশিয়ার মতো স্বৈরাচারী রাষ্ট্র এবং ভারত যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার মিত্রদের চুপ থাকার সুযোগ নেই। বিশ্ব গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে চাওয়া আমেরিকার বৈশ্বিক নীতির টেস্ট কেস হিসেবে বাংলাদেশ তাদের কাছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যের তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। কূটনীতিক সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে তাদের হাতে থাকা সব ধরনের টুলস ব্যাবহার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের আগামীর মোড়লপনা অনেকাংশে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপর নির্ভর করছে। তাই বাংলাদেশ অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিন্দুমাত্র পিছপা হবেনা এবং সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাবে। আপনার কি মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক মন্ত্রী বা প্রতিনিধির ঘন ঘন বাংলাদেশ সফরের পরেও তারা বসে বসে আঙ্গুল চুষবে? প্রশ্নই আসে না।
৪. বিগত ১৫ বছর ধরে অবৈধ ক্ষমতাকে পুজি করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা লুটপাটতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই লুটপাটের সহযোগি হিসেবে পুলিশ-প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন স্তরের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মানুষ সরাসরি জড়িত।এরা যেকোন মূল্যে চাইছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুক। এরাই শেখ হাসিনা সহ নিজেদের বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে জনগণের বিপরীতে নিজেদের দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। সুষ্ঠ নিবার্চন হলে এদেশে যে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব থাকবে না সেটি হাসিনা সহ তার দোসররা ভালোভাবে অবগত।তারপরও হতাশ হবেন কেন?
৫. একতরফা ভোটের জন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবিকে নগ্নভাবে ব্যবহার শুরু করেছে সরকার। এমপি বানানোর প্রলোভন এবং টাকার বিনিময় নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনার হীন কৌশল অব্যাহত রেখেছে। সেটি জনগনের মুখে মুখে। নগ্নতা আর উগ্রতা পতনকে কাছে টেনে নিয়ে আসে।
৬. একতরফা ভোটে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ক্রয়-বিক্রয়ের সময় দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো না কোন উদ্মাদনা। উৎসব আমেজের ঘাটতি ছিলো। অপরাধী চক্রের সহযোগীরা যেমনি ভীত থাকে তেমনি কাপুরুষোচিত কাজেও থাকে না কোন উৎসাহ।
৭. জনগণের এই কঠিন সামাজিক-অর্থনেতিক সময়কে পাশ কাটিয়ে যারা হাসিনার হালুয়ারুটির ভাগবাটোয়রা এবং টাকার প্রলোভনে যারা ভোটে যাওয়ার কথা বলছেন তারা জাতীয় বেঈমান বা বর্তমান প্রজন্মের কাছে রাজাকার মুনাফেক হিসেবে চিহ্নিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্নকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারেরা এভাবেই সাধারণ জনগণের কাছে উপস্থাপন হতো।
তারা তখন টিকতে পেরেছিলো?
৮.হাসিনার অধীনে একদলীয় ভোটের প্রতিবাদে বিএনপির চলমান আন্দোলন সংগ্রামে জনমানুষের আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার জন্য সড়কে গুটিকয়েক গাড়ি বের হলেও যাত্রী নেই-যেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর রাজনীতিতে এধরণের জনসমর্থনের ঘটনা এবারই প্রথম। আমাদের সাথে আছে জনগন যারা দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সুতরাং আপনার আমার হারানোর কিছুই নাই।
এই লড়াইয়ে আপনার তাহলে কিসের ভয়?
৯. বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে সরকার কর্তৃক গঠিত কিংস পার্টি বিএনএম এবং তৃণমূল বিএনপিকে নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে নোংরা খেলায় মেতেছিলো তা আলোর মুখ দেখেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই নোংরামি দেখে অভ্যস্ত জনগণ আজ এদেরকে চরমভাবে প্রত্যাখান করেছে। হীন কাজে সফলতা আসে না, আসবেও না।
১০. একতরফা ভোট করবার জন্য ফ্যাসিষ্ট হাসিনা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারাবন্দি করেছে। কারাদন্ড দেয়া হচ্ছে হাসিনার পুতুল আদালতে। তবু আন্দোলন থেমে নেই। লন্ডনে বসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের জনগনকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি অবিসাংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। তারেক রহমানের দক্ষ নেতৃত্বে হাসিনাকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব তথা জনগনের বিরুদ্ধে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এটাই আমাদের বড় অর্জন এবং প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তির শক্তি আর সাহসের মুখে তছনছ হবে হাসিনার অবৈধ মসনদ।
১১. হাসিনার অবৈধ শাসনকে সমর্থন করার জন্য আজ বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষী জনগনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে চিনের অর্থায়ণ এবং ভারতের রাজনৈতিক বুদ্ধি চর্চায় দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন হয়ে যায়। আসন্ন দ্বাদশ সংসদের ভোটেও ভারত তার পূর্বের সমর্থন অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশের জনগন ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিজয়োল্লাস। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ভারতের বর্তমান অবস্থান দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ভারতই। অতএব গণতন্ত্র ধবংস করে ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে ভারত হাসিনাকে চায়, নাকি জনগনকে চায় সেটি তাদের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনগনের বাইরে ভারতের অবস্থান গ্রহণ হবে আত্মঘাতি-অবিলম্বে সেটি তারা উপলব্ধি করবেই।
১২. ফ্যাসিষ্ট হাসিনার সাথে বর্তমান যে লড়াই সেটি শুধু বাংলাদেশের অস্বিত্ব জড়িত নয়, এটির সাথে বিশ্বে যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অবস্থান সম্পৃক্ত। আপনার আমার ভাগ্য খেলার সাথে আছে পুরো বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিধর দেশগুলো।
আপনার ভাবনা বা যুক্তিগুলো গণতন্ত্রকামী জনগনের বিজয়কে তরান্বিত করতে শুরু করেছে। হাসিনার বেপরোয়া কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি আপনার বিজয়ের হাতছানি।
প্রিয় মুক্তিকামী জনতা। ১৯৭১ সালের মত বর্তমান হাসিনা বাহিনীর সাথে জনতার লড়াই শুরু হয়েছে। পাকিস্তানীরা যেমন নাস্তানাবুদ হয়েছিলো ঠিক তেমনি নিষ্ঠুর-নির্মম পরিণতি অপেক্ষা করছে হাসিনার কপালে। বাংলাদেশের জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সুতরাং এই লড়াইয়ে বিজয় অনিবার্য।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থকারীদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটির কার্যকারিতাও শুরু হয়ে গেছে। পোশাক খাতের শ্রম অধিকার লঙ্ঘনে ভিসানীতি এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অচিরেই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন হাসিনা যেটি শুরু করেছে এটি তার টিকে থাকার অংশ। ফলে মুক্তিকামী জনতার হতাশ হওয়ার আর কোন কারণ নেই।
প্রিয় শুভাকাঙ্খীবৃন্দ,
আর একটু ধৈর্য ধরুন। যার যার অবস্থান থেকে কাজ করুন। নির্বাচন করে ফেলার কোন সক্ষমতা হাসিনার নেই। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পক্ষের শক্তিগুলোর চিরশত্রু। যে কোন মুহুর্তে তার পতন হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের শক্ত অবস্থান আর মুক্তিকামী জনতার চলমান আন্দোলনে পালানোর পথ পাবে না ফ্যাসিষ্ট বাহিনী। এখনো যারা হতাশায় ভুগবেন তারাই বর্তমান কার্যক্রমের দর্শক ছাড়া কিছুই না। হতাশা থেকে বেরিয়ে নিজের মনোবল শক্ত করুন। আন্দোলনে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। আপনার মনের চাওয়া পূরণ হতে যাচ্ছে। আপনিই আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। আপনার, আমার হাত ধরেই স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে উঠবেই-ইনশাআল্লাহ। -- সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন