ইসুবগুলের ভূষির উপকারিতা!- ভিডিও সহ


আমরা হয়তো সবাই ইসুবগুলের ভুষি (Plantago Ovata) এই শব্দ টার সাথে পরিচিত। আসুন জেনে নেয়া যাক ইসবগুল সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ইসুবগুল একটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ । এটি লম্বায়.১২ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়। বীজ বপনের দুই মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ১১০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল তোলার উপযোগী হয়।

এর পরিপক্ক বীজের সবথেকে বাইরের ত্বক ও এর সংলগ্ন নিচের লেয়ার দুটি একসাথে আলাদা হয়ে আসে যা আমরা ইসবগুলের ভুষি বলে থাকি।

বিদেশি বাজারে এটি সিলিয়াম হাস্ক নামে পরিচিত।

ইসুবগুলের উপকারিতা (Plantago Ovata Benefits)

পেটের সমস্যা দূর করেঃ পাকস্থলী ঠান্ডা শীতল রাখতে এবং হজমের সমস্যা দূর করতে ইসুবগুলের ভুষির তুলনা নেয়। পেটের ব্যথার উপশম করে ইসুবগুলের ভুসির শরবত। এছাড়া আইবিএস এর সমস্যা সমাধানে ভালো ফল দেয় ইসুবগুলের ভুষি। যারা আমাশয়ে ভুগছেন তাদের জন্য ইসবগুলের ভুষি অত্যন্ত ভালো কাজ করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ইসবগুলের ভুষি একটি হাইপো কোলেস্টেরল তালিকার ফুড এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়া এটি রক্তে ট্রাইগিস্নসারাইডের পরিমাণ কমায়। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ইসবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে বহুল প্রচলিত। ৫ থেকে ১০ গ্রাম ইসুবগুলের ভুষি নিয়ে এক কাপ ঠান্ডা বা গরম পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তাতে দুই তিন চামচ চিনি মিশিয়ে (চিনি না মেশালেও সমস্যা নেই) সকালে খালি পেটে বা রাতে শোয়ার আগে খেলে উপকার পাওয়া যায়।এতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের পেটের পীড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করে। যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা এই প্রক্রিয়ায় দুই মাস ইসুবগুলের ভুষি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে বলে আশা করা যায়। পেট স্বাভাবিক হলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি না খাওয়াই ভাল এটি বেশি মাত্রায় খেলে ডায়রিয়া সমস্যা হতে পারে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করা। ইসুবগুল পেটভরা রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্র পরিষ্কারে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের ওজন হ্রাসের সময় চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়ায় শরীরে অনেক বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় এই বর্জ্য পদার্থ গুলো শরীর থেকে বাহির হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। না হলে এটা শরীরের অনেক ক্ষতি করে।ইসুবগুলের ভুষি পাকস্থলী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়ার মাধ্যমে। তারপর হঠাৎ করে কাঁচা খাবার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পাকস্থলীর জন্য বেশ ভারী হয়ে যায় এবং তাই কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপার সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইসবগুলের ভুসি খেলে এই সকল সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।প্রতিদিন সকালে অথবা খাওয়ার পূর্বে কুসুম গরম পানিতে ইসবগুল ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেট ভরার অনুভূতি হয় এবং অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে। তবে এখানে অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র পেট ভরার অনুভূতি নিয়ে থাকলেই আমাদের শরীর চলবে না এজন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ইসুবগুলের ভুসিতে আছে অত্যাধিক পরিমাণে দ্রবণীয় ডায়েটারি ফাইবার যা আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য শোষণ ভিলাই এর উপর এক জালোকের সৃষ্টি করে এর ফলে ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ শোষিত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। অশ্ব রোগের কোষ্ঠবদ্ধতা অশ্ব রোগের প্রধান কারণ তাই অশ্ব রোগীরা নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেলে ভালো উপকার পাবেন।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াঃ যেকোনো কারণে প্রস্রাব হলুদ, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে ইসুবগুলের ভুষি তাতে সাহায্য করতে পারে।

হাত পা জ্বালাপোড়াঃ মাথা ঘোরা হাত পা জ্বালাপোড়া হলে এক গ্লাস আখের গুড়ের শরবত এর সঙ্গে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়রিয়া কমাতেঃ ডায়রিয়ার সময় ইসবগুলের ভুষি ক্ষুদ্রান্ত থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি শুষে নিয়ে স্টুল ঘন করে ও বারবার টয়লেটে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধেঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে ইসুবগুলের ভুষি তাদের জন্য খুবই ভালো। কারণ এটি পাকস্থলীতে গিয়ে যখন জেলির মত একটি পদার্থের রুপ নেই তখন তা গ্লুকোজের ভাঙ্গন ও শোষণের গতিকে ধীর করে এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে খাবার পর নিয়মিতভাবে দুধ বা পানির সাথে ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে পান করুন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে তবে দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাবেন না এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

অ্যাসিডিটি প্রতিরোধেঃ অনেক মানুষ এই অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য ইসবগুল হতে পারে একটি ঘরোয়া প্রতিকার। ইসুবগুলের ভুষি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। যা এসিডিটি থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি সঠিক হজমের জন্য এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণের সাহায্য করে।

ইসুবগুলের ভুষির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এবার আমরা জেনে নিই ইসুবগুলের ভুষির (Plantago Ovata) কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আমরা জানি যে কোন খাবারে বেশি পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। ইসুবগুলের ভুষির ক্ষেত্রেও তাই । চলুন এবার দেখে নিয়েছি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো কি।

এলার্জি দেখা দিতে পারে এমতাবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

যদি আপনার এপেন্ডিসাইটিস ও স্টোমাক ব্লকেজেরমত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ইসুবগুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কখনো কখনো এটি পাকস্থলীতে টান সৃষ্টি করতে পারে তাই এমন ক্ষেত্রে ইসুবগুল খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অনেকক্ষণ আগে ভিজে না রেখে সাথে সাথে মিশিয়ে পান করুন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন