কাচকি মাছ দিয়ে তৈরি চানাচুর পুষ্টিকর কেন?

কাচকি মাছ

কাচকি পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ দেশি প্রজাতির কাঁটাযুক্ত, খুব ছোট এবং প্রায় স্বচ্ছ মাছ। এটি নদী, খাল-বিলে প্রচুর পাওয়া যায়। কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা তো একদম না।

তবে চানাচুর অনেকেরই পছন্দের খাবার। তাই কাচকি মাছের পুষ্টি যাতে সহজে সবাই নিতে পারে সেই দিক লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক উদ্ভাবন করে ফেলেছেন কাচকি মাছের চানাচুর। কেবল চানাচুরই নয় উদ্ভাবন করা হয়েছে কাচকি মাছের কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার ও সহযোগিতায় ছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক মোবারক হোসেন।

কাচকি মাছের চানাচুর কেন পুষ্টিকর?
চানাচুর আর কাচকি মাছের মিশ্রণ শুনতে হয়ত একটু অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক মো. নুরুল হায়দার বলেন, এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। শুরুতে মাছগুলোকে পরিষ্কার করা হয়েছে, এরপর মাছগুলোকে একটি যন্ত্রে বাতাস দিয়ে শুকোনো হয়েছে, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন ল্যাবরেটরিতে এর পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে।
তারপর ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হয়েছে। এর ফলে মাছটি খেতে মুচমুচে ও সুস্বাদু হয়। কড়া ভাজার কারণে এর আর্দ্রতা কমে যায় বলে বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়।
অন্যদিকে বেশিদিন মুচমুচে থাকে। এছাড়া এভাবে ভাজার কারণে মাছ খুব ভালভাবে জীবাণুমুক্ত হয়।
এরপর ভাজা মাছকে চানাচুরের সাথে মেশানো হয়। চানাচুরের মধ্যে এমনিতেই অনেক কিছুর মিশ্রণ থাকে। যেমন বেসনের তৈরি বুন্দিয়া, লম্বা ঝুরি, বাদাম, বুট, মটরশুঁটি, বিভিন্ন রকম ডাল ভাজা ইত্যাদি।
অধ্যাপক মো. নুরুল হায়দার বলেন, চানাচুরের পুষ্টিগুণ এমনিতেই ভাল। এতে কাচকি মাছ মেশানোর ফলে এর পুষ্টিগুণ আরও বাড়ল। মুচমুচে মাছ যুক্ত হওয়ায় খাবারটির স্বাদেও মজা হল। মাছ মেশানোর পর ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেড়েছে।
কাচকি মাছ মেশানো হলেও দেখতে সাধারণ কটকটির মতোই।
কাচকি মাছ মেশানো হলেও দেখতে সাধারণ কটকটির মতোই।

কেন কাচকি মাছ?
এ বিষয়ে অধ্যাপক হায়দার বলেন, ‘আমি জাপানে পিএইচডি করেছি। সেখানে দেখেছি ছোট ছোট যেসব মাছ আছে, সেগুলোকে তারা অনেকটা চানাচুরের মতোই স্ন্যাক হিসেবে খায়। সেগুলো চিপসের মতো প্যাকেট করে দোকানে বিক্রি হয়। বাংলাদেশেও মলা, ঢ্যালা, কাচকি এরকম অনেক ছোট মাছ রয়েছে। কাচকি মাছ খুব ছোট হলেও এর পুষ্টি কিন্তু অনেক। এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল, আয়রনের খুব ভাল উৎস। এই মাছ কাটার ঝামেলা নেই। নুড়ি, পাথর, ছোট শামুক বেছে নিলেই হল।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে ছোট শিশুরা ছোট মাছ খেতে পছন্দ করে না। শিশুদের কিন্তু এই ছোট মাছ খাওয়ানো খুব প্রয়োজন। মাছে যে আমিষ পাওয়া যায় সেটি সবচেয়ে ভাল। কাচকি মাছ আমরা মাথা, চোখ থেকে শুরু করে পুরোটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। এটাকে মেশানোর ফলে প্রচলিত একটি খাবারের পুষ্টিগুণ আরও অনেক বেড়ে গেল।

এখন এগুলো বাজারজাত করার জন্য খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে নমুনা পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন