আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া কোন ক্ষেত্রে জায়েজ এবং কোন ক্ষেত্রে জায়েজ নয়।

প্রথমেই আলোচনা কবরো কোন ক্ষেত্রে অন্যের নিকট সাহায্য চাওয়া জায়েজঃ

মানুষের যেকোনো দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন ও এককথায় যা কিছু প্রয়োজন সবকিছু মহান আল্লাহর নিকট চাওয়া নিঃসন্দেহে উত্তম। তবে একান্ত নিরুপায় হলে যে সকল প্রয়োজন মানুষ পূরন করতে পারবে সেটা মহান আল্লাহ যাদেরকে সামর্থ্য, ক্ষমতা ও ধন সম্পদ দিয়েছেন তাদের নিকট নিজের অভাব-অনটনের কথা তুলে ধরে সাহায্য চাওয়া মোটেও দোষণীয় নয় বরং জায়েজ আর কোন অসহায় দুর্বল ও বিপদগ্রস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি যদি কোন সামর্থ্যবান ব্যক্তির নিকট সাহায্য অর্থাৎ যা সে দিতে পারবে সেটা চায় তাহলে সামর্থ্যবান ব্যক্তির উচিত, তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করা। এতে আল্লাহ খুশি হন এবং উপকার করা ব্যাক্তিকে উত্তম বিনিময় দান করেন।
আল্লাহ তাআলা ভালো ও আল্লাহ ভীতির কাজে একে অপরকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো।”[সূরা মায়েদা: ২]

মহান আল্লাহ বলেনঃ
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।’[সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৬১]

যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৬১}

নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ {সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১৮}

এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, (১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে। (২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা গ্রহণ করবে। (৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে, তুমিও তার মঙ্গল কামনা করবে। (৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন) বলবে। (৫) যখন সে অসুস্থ হবে তাকে, দেখতে যাবে। (৬) এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।’ [মুসলিম : ৫৭৭৮; মুসনাদ আহমাদ : ৮৮৩২]

যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ [মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাঊদ : ৪৯৪৮; তিরমিযী : ১৪২৫

বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরও বলেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরাম নেই।’ [বুখারী : ৬০০৭; মুসলিম : ৭৬৫৯]

অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ [বুখারী : ৫৬৪৯; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ৭৩২৫]

হে মুসলিম নারীগণ, এক প্রতিবেশি যেন তার অপর প্রতিবেশির পাঠানো দানকে তুচ্ছজ্ঞান না করে, যদিও তা ছাগলের পায়ের একটি ক্ষুর হয়।’ [বুখারী : ২৫৬৬; মুসলিম : ২২৬]

কোন ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট সাহায্য চাওয়া যাবেনাঃ
যদি কোন ব্যাক্তি বা যে কেউ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে এমন কিছু প্রার্থনা করবে, যা দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীর কারো নেই অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতাবান নয়-যেমন: বিপদে পড়ে মাজারে কবরে গিয়ে মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আহবান করা। আবার যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, সে অলৌকিক শক্তির অধিকারী এবং অলৌকিকভাবেই কোন ঘটনা সংঘটিত করতে, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য, রোজগারহীনকে রোজগার, সন্তানহীনকে সন্তান দিতে পারে, তাহ’লে সে মুশরিক বলে গণ্য হবে।
আবার সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পীরের পায়ে সিজদা করা বা নেক মাকছূদ পূরণের জন্য, রোগমুক্তির নিয়তে পীরের পা চাটা, পায়ে চুমু খাওয়া, গাড়ি চাটা, দাড়িতে চুমু খাওয়া, ব্যবহার্য থালাবাটি বা অন্য কোন বস্ত্ত চাটা বা চুমু খাওয়া, মাযারে চুমু খাওয়া। ইত্যাদি এগুলো বড় শিরক যা তওবা ছাড়া মহান আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না মোটকথা আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে ফরিয়াদ করা বা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকা ‘শির্কে আকবার’

আল্লাহ বলেনঃ আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব তুমি যদি তা করো, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সূরা ইউনুস, আয়াত ১০৬]

আল্লাহ বলেনঃআর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়। যদি তোমরা তাদেরকে ডাকো, তারা তোমাদের ডাক শুনবে না। আর শুনতে পেলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না [সূরা ফাতির, আয়াত ১৩, ১৪] এ ছাড়াও এমন আরো অনেক দলিল রয়েছে

মহান আল্লাহ বলেনঃনিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন আর যে-ই আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ রটনা করে। [সূরা নিসাঃ৪৮]

অন্য আয়াতে বলেনঃনিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। সূরা মায়েদাহঃ৭২]
[আল্লাহ সবচেয়ে ভাল যানেন]

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন