(এক)
অনেকে প্রশ্ন করেন, “সালাফী মানহাজ যে হক্ক, তাঁর প্রমাণ কি? আমাদের জন্য শুধু কুরআন ও হাদীস মানাই যথেষ্ঠ, কুরআন ও হাদীসে কোথাও সালাফী মানহাজ মানার কথা বলা হয় নাই।”
তারা তাদের কথার সপক্ষে এই হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুইটি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নত।” মুয়াত্ত্বা মালিকঃ ১৫৯৪, মিশকাত আল-মাসাবীহঃ ১৮৬। হাদীসটি হাসান। এই হাদীসের সপক্ষে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে হাসান সানাদে ইমাম হাকিম রহি’মাহুল্লাহ ‘শাহিদ’ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইসলামী শরীয়তে কোন একটি ব্যাপার পূর্ণাংগভাবে বুঝতে হলে সেই ব্যাপারে ক্বুরআন ও হাদীসের সবগুলো বাণী একত্রে বুঝতে হয়। ক্বুরআন ও হাদীসের কোন একটি কথা এককভাবে গ্রহণ করে বাকী কথাগুলো বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অনেক সময় মানুষ ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে। উপরের উদাহরণ এমনই একটি বিষয়। আপনি যদি উপরোক্ত হাদীস সঠিকভাবে না বুঝে মনে করেন যে, শুধুমাত্র ক্বুরআন ও হাদীস মানাই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ, “সালাফী মানহাজ” বা সাহাবীদের আদর্শ জানার বা বুঝার প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি পথভ্রষ্ট হবেন।
উদাহরণ ১ -
আপনি যদি এই হাদীস দ্বারা “শুধুমাত্র ক্বুরআন ও মানাই যথেষ্ঠ, সাহাবাদের আদর্শ মানার প্রয়োজন নেই” - এই দাবী করতে চান তাহলে জেনে রাখুন “আহলে ক্বুরআন” নামধারী হাদীস অস্বীকারকারীরাও আপনার চেয়ে কম করে দ্বীনকে শুধুমাত্র ক্বুরআন মানার মাঝেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা তাদের সপক্ষে ক্বুরআনের এই আয়াতকে দলীল হিসেবে পেশ করেঃ
وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ
“আর আমি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি; যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।” সুরা নাহলঃ ৮৯।
ক্বুরআনের এই আয়াত দ্বারা হাদীস অস্বীকারকারীরা প্রমাণ করতে চায়, ক্বুরআন মানাই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ, হাদীস মানার প্রয়োজন নাই। কিন্তু ক্বুরআনের অন্য আয়াতে যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ মানার জন্য আদেশ করা হয়েছে, সেইদিকে তারা মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না।
উদাহরণ ২ -
আপনার উল্লেখিত হাদীসে ক্বুরআন ও হাদীসের কথা বলা হয়েছে। অপর হাদীসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বুরআন এবং আহলে বায়তের কথা বলেছেন, সুন্নতের কথা বলেননি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সাবধান! আমি তোমাদের মাঝে দুইটি ভারী জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। তন্মধ্য থেকে একটি আল্লাহর কিতাব এটি আল্লাহর রশি, যে এর অনুসরণ করবে হিদায়াতের উপর থাকবে, আর যে একে ছেড়ে দেবে সে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আমার আহলে বায়ত।” সহীহ মুসলিমঃ ৬১১৯, ৬১২২।
এই আয়াতের উপরে ভিত্তি করে, পথভ্রষ্ট শীয়ারা আহলে সুন্নাহর বিরোধীতা করে বলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আহলে বায়ত অনুসরণ করতে বলেছেন, সুন্নত মানতে হবে শুধুমাত্র আহলে বায়তের বর্ণিত হাদীস থেকে।
যাই হোক, আহলে ক্বুরআন বা শীয়াদের এই দাবী ভুল। কেননা ক্বুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীস একটি অপরটির বিপরীত নয়, বরং পরিপূরক হিসেবে ধরতে হবে। অর্থাৎ সুরা নাহলের ৮৯-নম্বর আয়াত অনুযায়ী ক্বুরআন আমাদের মূল সংবিধান। এর পাশাপাশি সুরা আল-হাশরের ৭ নম্বর আয়াত এবং মুয়াত্ত্বা মালিক এর ১৫৯৪-নং হাদীস অনুযায়ী ক্বুরআন ও সুন্নাহ আমাদের জ্ঞানের প্রধান দুইটি উৎস। সহীহ মুসলিমের ৬১১৯ নম্বর হাদীস অনুযায়ী আহলে বায়ত আমাদের জন্য অনুপম আদর্শ, তার মানে এই না যে বাকী সাহাবাদের মানার প্রয়োজন নেই। এর কোন একটা দলীল অপরটির বিরোধী বা সাংঘর্ষিক নয়, বরং পরিপূরক।
মূলত মুয়াত্ত্বা মালিকঃ ১৫৯৪-নং হাদীসের অর্থ হচ্ছে, ইসলামী জ্ঞানের মূল উৎস হচ্ছে দুইটি। প্রথমতঃ আল্লাহর কিতাব। দ্বিতীয়তঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা হাদীস। কিন্তু তার মানে এই না যে, নাজাত পেতে হলে শুধুমাত্র এই দুইটি অনুসরণ তার জন্য যথেষ্ঠ। বরং ক্বুরআন ও হাদীসে আমাদের জন্য ইসলাম, অর্থাৎ ক্বুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবাদের আদর্শ মানাকে “ওয়াজিব” করে দেওয়া হয়েছে।
(দুই)
“সালাফী মানহাজ” বলতে কি বুঝায়?
(১) শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “সালাফিয়্যাহ বা সালাফী মানহাজ হচ্ছে, আক্বীদাহ (বিশ্বাস বোধ) ও জীবন চলার পথে সালাফে সালেহীনের তথা সাহাবা, তাবিঈন ও ফযীলত প্রাপ্ত যুগের মানহাজের উপর চলা। সকল মুসলিমের জন্য সালাফে সালেহীনের মানহাজের উপর জীবন পরিচালনা করা ওয়াজিব।” আল-মানহাজ, প্রশ্ন নং-৬২।
(২) আল-লাজনাতুদ দাইমাহ অর্থাৎ সাউদী আরবের স্টান্ডিং ফাতওয়া কমিটির ফাতওয়াঃ
“সালাফিয়্যাহ হচ্ছে সালাফে সালেহীনের প্রতি সম্বন্ধকৃত। আর সালাফে সালেহীন হচ্ছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ এবং প্রথম তিন যুগের ইমামগণ (আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি রহম করুন)। আর সালাফী হচ্ছে, যারা সালাফে সালেহীনের মানহাজ (আদর্শ বা পদ্ধতির) উপর চলে, কিতাবুল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ করে, সেই পথে দাওয়াত দেয় এবং এর উপর আমল করে। আর উল্লেখিত কাজ-কর্ম যারাই সম্পাদন করবে; তারা সবাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআ’তের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” ফাতওয়া-লাজনাহ দাইয়ি’মাহঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৫, ফাতওয়া নং-১৩৬১।
(তিন)
“সালাফী মানহাজ” অনুসরণ করা আমাদের জন্য ওয়াজিবঃ
দলীল নং-১
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا
“আর কারো নিকট হেদায়েত (সৎ পথ) প্রকাশ হওয়ার পরেও সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং “মুমিনদের পথ” ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তাহলে সেই যেইদিকে ফিরে যেতে চায় আমি তাকে সেই দিকেই ফিরিয়ে দেব। অতঃপর তাকে আমি জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাসস্থল!” সুরা আন-নিসাঃ ১১৫।
সুরা নিসার ১১৫ নম্বর আয়াতে ভালো করে লক্ষ্য করুন, এখানে আল্লাহ তাআ’লা শুধুমাত্র রাসুলের বিরুদ্ধাচারণ করে এই কথা বলেন নাই, বরং সাথে আরো যুক্ত করেছেন “মুমিনদের পথ” ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে তাদেরকে তিনি জাহান্নামে পুড়াবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, “মুমিনদের পথ” বলতে কোন মুমিনদের বুঝানো হয়েছে। উত্তর হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ওহী নাযিলের সময় যারা মুমিন ছিলো, এই আয়াতের সর্ব প্রথম উদ্দেশ্য হবে সেই সমস্ত মুমিনগণ, অর্থাৎ সাহাবা (আল্লাহ তাঁদের সকলের উপর সন্তুষ্ট থাকুন)।
দলীল নং-২
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নীচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।” সুরা আত-তাওবাহঃ ১০০।
ক্বুরআনু কারীমে মুহাজির এবং আনসার সাহাবাদের ঈমান ও আমলের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এই ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া আরও ঘোষণা রয়েছে, যারা মুহাজির ও আনসার সাহাবাদেরকে ইহসান বা নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করবে আল্লাহ তাঁদের উপরো সন্তুষ্ট। এখানে পরবর্তীদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য মুহাজির ও আনসার সাহাবাদেরকে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেইজন্য দ্বীন বুঝা এবং মানার ব্যপারে সাহাবাদের আদর্শ অনুসরণ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
একারণে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের একান্ত বিশ্বস্ত এবং প্রিয় সহচর আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেছেন,
من كان مستناً فليستن بمن قد مات، فإن الحيّ لا تؤمن عليه الفتنة، أولئك أصحاب رسول الله - صلى الله عليه وسلم -؛ أَبَرَّ الناس قلوبًا، وأغزرهم علماً، وأقلّهم تكلّفًا
“তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি অন্য কাউকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, তাহলে সে যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যে সাহাবীগণ মৃত্যু বরণ করেছেন তাঁদেরকে আদর্শ হিসবে গ্রহণ করে। কেননা অন্তরের দিক থেকে তাঁরা হচ্ছেন সবচেয়ে সৎ ব্যক্তি, ইলম বা জ্ঞানের দিক থেকে সবচেয়ে বিদগ্ধ এবং আমলের দিক থেকে অকৃত্রিম।” জামি’উ বায়ানিল ইলমি ও ফাদ্বলিহী পৃষ্ঠা-৪১৯, মিশকাতুল মাসবীহঃ ১৯৩।
দলীল নং-৩
মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓاْ أَنُؤۡمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُۗ أَلَآ إِنَّهُمۡ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعۡلَمُونَ
“যখন তাদেরকে বলা হয়, যে সব লোক ঈমান এনেছে তাদের মতো তোমরাও ঈমান আন, তারা বলে, ‘নির্বোধেরা যেমন ঈমান এনেছে, আমরাও কি তেমনি ঈমান আনব’? আসলে তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৩।
এই আয়াত নাযিল হয়েছিলো, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তখন সাহাবা ছাড়া আর কোন মুমিন ছিলো না। সুতরাং আয়াতে উল্লেখিত, “যে সব লোক ঈমান এনেছে” দ্বারা সাহাবাদেরকে বুঝানো হয়েছে। এই আয়াত থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআ’লা মানব জাতিকে সাহাবাদের মতো ঈমান আনার আদেশ দিয়েছেন, সাহাবাদের পরে যারা এসেছে অর্থাৎ আমাদের মতো ঈমান আনার জন্য বলা হয়নি। এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের জন্য সাহাবাগণ আমাদের জন্য সত্যের মাপকাঠি বা আদর্শ।
দলীল নং-৪
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকদের মাঝে সর্বোত্তম প্রজন্ম হচ্ছে সাহাবীরা, এরপরে তাবেয়ীরা, এরপরে তাবে-তাবেয়ীরা। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা।” সহীহ বুখারীঃ ৩৬৫১, মুসলিমঃ ২৫৩৩।
যেহেতু এই উম্মতের লোকদের মাঝে সাহাবারা সর্বোত্তম, একারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য তাঁদেরকে অনুসরণ করার আদেশ দিয়ে বলেছেন,
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة
“তোমাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, আমার সুন্নত এবং আমার মৃত্যুর পর আমার সাহাবায়ে কিরামের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। আর তোমরা ধর্মের নামে নব আবিষ্কৃত বিষয়াবলি থেকে সতর্ক থাকবে, কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই হচ্ছে বিদআ’ত। আর প্রত্যেক বিদআ’তই হচ্ছে পতভ্রষ্টতা।” সকল সূত্রে হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ-ই-আহমাদঃ ৪/১২৬, তিরমিযীঃ ২৬৭৬, হাকীম খন্ড-১ হাদীস নং-৯৬, ইমাম বাগাভী রহি’মাহুল্লাহ শারহুস সুন্নাহঃ ১০২। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আল-ইরওয়াঃ ২৪৫৫।
দলীল নং-৫
আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বনী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তাহলে আমার উম্মতের মধ্যেও কোন ব্যক্তি একই কাজ করবে। আর বনী ইসরাঈলের লোকেরা ৭২-টি দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মতের লোকেরা ৭৩-টি দলে বিভক্ত হবে। (এদের মাঝে) শুধুমাত্র একটি দল ছাড়া তাদের বাকী সবাই জাহান্নামী হবে।” সাহাবীগণ বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল! সেই দল কোনটি?” তিনি বললেন, “আমি ও আমার সাহাবীগণ যার (যেই দ্বীনের) উপর প্রতিষ্ঠিত।” তিরমিযীঃ ২৬৪১, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসটি হাসান।” মিশকাত, তাহকীক সানীঃ ১৭১, সিলসিলাহ আস-সহীহাহঃ ১৩৪৮।
দলীল নং-৬
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাঁর সাহাবা এবং পরবর্তী দুই প্রজন্মের রীতিনীতি বা আদর্শ আঁকড়ে ধরা উপদেশ দিয়ে বলেনছে, “আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, তারপর তাদের পরবর্তীদের যমানা, তারপর তাদের পরবর্তীদের যমানা, তারপর মিথ্যাচারের বিস্তার ঘটবে। এমনকি কাউকে শপথ করতে না বলা হলেও সে শপথ করবে, আর সাক্ষ্য প্রদান করতে না বলা হলেও সাক্ষ্য প্রদান করবে।” হাদীসটি সহীহ, ইবনু মাজাহঃ ২৩৬৩, তিরমিযীঃ ২১৬৫৷
দলীল নং-৭
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা আমার সাহাবাদেরকে সম্মান কর। কেননা তারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানুষ।” মুসনাদে আহমাদঃ খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১১২। তাহকীক, আহমাদ শাকের রহিমাহুল্লাহ, নাসায়ী, হাকেম।
(চার)
পূর্ব যুগের বিদআ’তী যেমন শীয়া, খারেজী, জাহমী, ক্বাদারিয়া অথবা আধুনিক যুগে মুসলিমদের মাঝে আবির্ভূত দল যেমন তাবলীগ জামআ’ত, জামআ’তে ইসলামী, হিযবুত তাহরীর...এমন সবাই দাবী করে, “আমরা ক্বুরআন ও সুন্নাহ মানি”। তাদের মুখের দাবী অনুযায়ী তারা সবাই ক্বুরআন ও সুন্নাহ মানে, কিন্তু ক্বুরআন ও সুন্নাহ বাস্তবায়ন বা implementation-এ তারা একে অন্যের বিরোধীতা করে। কারণ প্রত্যেকটি দল ক্বুরআন ও হাদীস মানে, কিন্তু তাদের দলের নেতার বুঝ বা আদর্শ অনুযায়ী। পক্ষান্তরে যারা সালফে সালেহীনের মানহাজ অনুসরণ করেন, তাদের বিশ্বাস হচ্ছে যেহেতু ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্ম শ্রেষ্ঠ, সুতরাং ইসলাম জানা, বুঝা ও মানার ব্যাপারে তাঁদের আদর্শ আমাদের জন্য সর্বোত্তম এবং নিরাপদ। সেইজন্য সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে আমি আহবান জানাবো, আপনারা সালাফী মানহাজ study করুন, সালাফী মানহাজ অনুসরণ করুন। আপনি অনেক বিভ্রান্তি এবং গোমরাহী থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তোওফিক্ব দান করুন। (আমিন)
«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ»
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন