আফগানিস্তানের অসহায় নাগরিকরা যাবেন কোথায়?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদমাধ্যম, সর্বত্র চোখে পড়ছে আফগান নাগরিকদের দেশ ছাড়তে চাওয়ার কাকুতিমিনতির চিত্র। কিন্তু বাস্তবে, কূটনৈতিক যোগাযোগ ছাড়া আফগানিস্তান ছাড়ার সম্ভাবনা সব নাগরিকের জন্যই অত্যন্ত ক্ষীণ।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করেছেন অসংখ্য আফগান নাগরিক। আকাশপথ ছাড়া দেশ ছাড়ার আর কোনো উপায় নেই বলে মরিয়া হয়ে বিমানের চাকায় ঝুলে পড়তেও দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন না তারা।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে ২৫ বছর বয়সি আহমেদ বলেন, কাবুলে থাকতে তার ভয় করছে বলেই তিনি চলে যেতে চান। তিনি বলেন, "আমি ফেসবুকে পড়েছি যে, ক্যানাডা আমাদের আশ্রয় আবেদন গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আর যেহেতু আমি সামরিক বাহিনীতে যুক্ত ছিলাম, ফলে আমাকে তালেবান সমর্থকরা মারবেই।"

আফগানিস্তানকে সাহায্য করবে কারা?

আফগানিস্তানে পশ্চিমা দেশগুলির সমর্থনে ন্যাটো-বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস বলেন, পশ্চিমা বাহিনীর কাজ আফগানিস্তানে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে ও "এই অসম্পূর্ণ সমস্যা সারা বিশ্বের জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। ফলে সবার উচিত অবিলম্বে আফগানিস্তানকে সাহায্য করা।"

ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, আফগান নাগরিকদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করবে তারা, যাতে করে বিপন্ন আফগান, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, নিরাপদ থাকেন। বর্তমানে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আফগানিস্তানে কর্মরত কূটনীতিকদের পাশাপাশি সেইসব আফগানকে দেশ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন, যারা এক সময় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছে।

সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মোট ৪০টি রাষ্ট্রের সাথে মিলে একটি যৌথ বিবৃতিতে সবাইকে আহ্বান জানায় যাতে করে 'সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে আফগানিস্তান থেকে আফগান ও বিদেশি নাগরিকরা বেরিয়ে আসতে পারেন'।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো একসাথে এই সংকট মোকাবিলা করবে। তিনি আরো বলেন, "আমাদের আসন্ন অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের ঢল থেকে নিজেদের বাঁচাতে হবে ও এর ফলে যত ধরনের পাচার ও অপরাধ সৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।"

নতুন শরণার্থী সংকটের আশঙ্কা

ইউরোপের জন্য আফগান সংকট ২০১৫ বা ২০১৬ সালের মতো শরণার্থী সংকট বয়ে আনতে পারে, বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেই, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আফগান অভিবাসীদের নিজদেশে ফেরত পাঠানো স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়।

আফগানিস্তান থেকে নাগরিকদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার আলোচনা দেখা গেলেও সেভাবে চোখে পড়ছে না আফগানদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান। ইনফোমাইগ্রেন্টসের মতে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে ক্যানাডা।

গত শুক্রবার ক্যানাডার অভিবাসন মন্ত্রী মার্কো মেন্দিসিনো ঘোষণা দেন যে তারা মোট ২০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেবে। এর মধ্যে প্রাধান্য পাবে আফগান সমাজের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নারী, সরকারি কর্মকর্তাসহ সেই সব আফগান নাগরিক, যারা বিশেষ পরিস্থিতির ফলে ঝুঁকিতে আছেন।

মেন্দিসিনো বলেন, "ক্যানাডা চুপচাপ এই সংকট প্রত্যক্ষ করবে না।" একই দিনে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম বিমান ক্যানাডায় অবতরণ করেছে বলে জানায় দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়াও জানিয়েছে, আফগানিস্তানে কর্মরত অস্ট্রেলিয়ান সেনার সাথে যে সকল স্থানীয় কাজ করেছেন, তাদের একটা অংশকে সে দেশে আশ্রয় দেয়া হবে। কিন্তু কতজনকে আশ্রয় দেয়া হবে দেশটি তা জানায়নি।

এসএস/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন