মেসির কাছে এখনো ৬৫০ কোটি টাকা ঋণী বার্সা


দেনার দায়ে ডুবে আছে বার্সেলোনা। কিন্তু যতটা আলোচনা হচ্ছে, বার্সেলোনার ভেতরের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ। সম্প্রতি বার্সেলোনাই তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, ১.১৭৩ বিলিয়ন ইউরো ঋণের বোঝা রয়েছে তাদের মাথায়। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদী ঋণই ৭৩০ মিলিয়ন ইউরো। বাকি ৪৪৩ মিলিয়ন ইউরোর ঋণটা দীর্ঘ মেয়াদী। এ তো বাইরের ঋণের হিসাব।

ক্লাবের ভেতরেও রয়েছে বিশাল অঙ্কের ঋণ! ভেতরের সেই ঋণটা দলের খেলোয়াড়দের কাছে!
বার্সার ভেতরের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, খেলোয়াড়দের কাট-সাট করা বেতন-ভাতাও দিতে পারছে না! মানে এ মৌসুমে খেলোয়াড়দের কাট-সাট বেতনের সামান্য অংশই এ পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। বেশির ভাগ অংশই পড়ে রয়েছে ঋণের খাতায়। বার্সেলোনার মূল দলের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৩ জন। এর মধ্যে এক লিওনেল মেসির কাছেই এখনো বেতন-ভাতা বাবদ ৬৩.৫ মিলিয়ন ইউরো ঋণী বার্সেলোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৬৫০ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭ টাকা! মেসির কাছে বার্সেলোনার এই ঋণটা কাটসাট বেতনের হিসেবেই। মূল বেতনের হিসেবে ঋণের অঙ্কটা এর দ্বিগুণেরও বেশি হবে!

শুধু মেসির কাছেই নয়, মূল দলের অন্য সদস্যদের বেতন-ভাতাও একই রকমভাবে বকেয়া রেখেছে বার্সেলোনা! সব মিলে খেলোয়াড়দের কাছেও বিশাল অঙ্কের ঋণ রয়েছে বার্সার। স্পেনজুড়ে আলোচনা, মেসির সঙ্গে বিস্ময়কর চুক্তির কারণেই এভাবে ঋণে ডুবে গেছে বার্সেলোনা!

দুই দিন আগে স্পেনের জনপ্রিয় পত্রিকা এল মুন্ডো এক বোমা ফাটিয়েছে। ফাঁস করে দিয়েছে মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার সর্বশেষ চুক্তির টাকার অঙ্ক। যে অঙ্কটি বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের তো বটেই; অন্যদেরও চোখ বিস্ময়ে কপালে তুলে দিয়েছে! মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার ৪ বছরের চুক্তির মূল্য কিনা ৫৫৫.২৪ মিলিয়ন ইউরো! আক্ষরিক অঙ্কে ৫৫৫২৩৭৬১৯ ইউরো! বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৫৭০২ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা!

চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা, ইমেজ স্বত্ব ও অন্যান্য বোনাস মিলিয়ে মেসি ৪ বছরে এই টাকা আয় করবেন বার্সেলোনা থেকে। চুক্তির পরিসীমাটা ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরে ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মেসির আয় ১৩৮.৮১ মিলিয়ন ইউরো! এই হিসেবে চুক্তির প্রথম তিন বছরের টাকা পেয়েও গেছেন মেসি। কিন্তু ঝামেলাটা বেঁধেছে চলতি মৌসুমে এসে।

এমনিতেই দেয়ার দায়ে হাবুডুবু খাচ্ছে বার্সেলোনা। এর মধ্যে আবার থাবা বসিয়েছে করোনা। করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য ক্লাবের মতো বার্সেলোনারও আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। তাই অন্যান্য ক্লাবের মতো বার্সেলোনাও খেলোয়াড়দের বেতন কাট-সাট করার নীতি গ্রহণ করেছে। মেসিসহ বার্সেলোনার সিনিয়র খেলোয়াড়েরা প্রথমে বেতন কর্তনে রাজি ছিল না। তবে অনেক দেন-দরবারের পর বার্সেলোনা খেলোয়াড়দের সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে বেতন কর্তনের একটা চুক্তি করেছে।

শর্তটা হলো এ মৌসুমে বেতন-ভাতার একটা অংশ নগদ দেওয়া হবে। বাকিটা আগামী কয়েক মৌসুমে সমন্বয় করা হবে। তবে মূল দলের যে ৪ জন নতুন করে চুক্তি নবায়ন করেছেন, সেই জেরার্ড পিকে, ক্লেমেন্ত লেংলেত, মার্ক আন্দ্রে তের স্টেগান এবং ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং-এই ৪ জন এই কর্তন চুক্তির বাইরে। বাকি সবাই বেতন কর্তন চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। এই চুক্তি অনুসারে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা খাতেই বার্সেলোনার বেচে যাচ্ছে ১৭২ মিলিয়ন ইউরো!

কিন্তু কর্তন চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতার যে অংশটুকু দেওয়ার কথা, বার্সেলোনা সেটাও দিতে পারছে না। প্রতিশ্রুত অংশের সামান্য অংশই এ পর্যন্ত পেয়েছেন খেলোয়াড়েরা। বড় অংশটাই এখনো বকেয়া রয়েছে। মেসির কথাই ধরুন। কর্তনের হিসেবেও মেসির পাওয়ার কথা ৭২ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু বার্সেলোনা মৌসুমের এ পর্যন্ত মেসিকে দিয়েছে মাত্র ৮.৫ মিলিয়ন ইউরো। বাকি ৬৩.৫ মিলিয়নই বকেয়া রয়েছে।

মৌসুম প্রায় শেষের পথে। অথচ মৌসুম শেষেই শেষ হয়ে যাবে বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ। মেসি যেহেতু এখনো চুক্তি নবায়ন করেননি বা নবায়ন করতে রাজি হননি, ফলে ধারণা করা হচ্ছে মৌসুম শেষেই বার্সেলোনা ছাড়বেন তিনি। কিন্তু এখনো বার্সেলোনা তার বেতনের বেশির ভাগ টাকাই বকেয়া রেখেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, মেসি এই বকেয়া বেতেনর টাকা কবে পাবেন? মৌসুম শেষে সত্যিই যদি তিনি বার্সা ছাড়েন, তাহলে আদৌ কি এই বকেয়া টাকা পাবেন মেসি?
প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন